ঢাকা,সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

পতাকা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানছে না মিয়ানমার

মনতোষ বেদজ্ঞ :
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে সেনা সমাবেশ বাড়িয়ে আবারো উত্তেজনা ছড়াচ্ছে মিয়ানমার। রবিবার কাঁটাতারের বেড়ার কাছেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টহল দিয়েছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনারা। এর আগে সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা সমাবেশের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। গত শুক্রবার দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সীমান্ত থেকে অতিরিক্ত সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সে কথা রাখেনি মিয়ানমার। উপরন্তু সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়ে নতুন করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা জানান, রোববার সকালে ৩ থেকে ৪ টি ট্রাকে করে বিজিপির সদস্যদের পাশাপাশি মিয়ানমার সেনারা সীমান্তে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা, সীমান্তের কোনাপাড়া এলাকায় বাঙ্কার খনন শুরু করে। এছাড়া, বিজিপির সদস্যরা সীমান্তের কাঁটা তার ঘেঁষে টহল দেয়। এদিকে, মিয়ানমার সীমান্তে সৈন্যের উপস্থিতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শনিবার বিজিবির সক্ষমতা বাড়ানো হলে হঠাৎ করেই মিয়ানমার সৈন্যরা সীমান্ত ছেড়ে চলে যায়।
ঘুমধুম চেয়ারম্যান ইউনিয়ন জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারের সৈন্য সমাবেশ আছেই। পতাকা বৈঠকের পর আহাবানী বার্তা একটু কম থাকলেও তারা আছেন।
বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান জানান, শনিবার সকাল থেকে অন্তত ৫শ সৈন্যের অবস্থান ছিলো তুমব্রু সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে। তাদের বিপরীতে বিজিবিও টহল জোরদার করে। মিট পতাকা নিয়ে বিজিবি দল কোনারপাড়া হয়ে তুমব্রু জিরো পয়েন্টের দিকে এগিয়ে গেলে, মিয়ানমার সৈন্যরা ৬টি ট্রাকে করে সেখান থেকে সরে পড়ে। এছাড়া বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে তৈরি বাঙ্কারে অবস্থান নেয়া মিয়ানমার সৈন্যরাও দ্রুত চলে যায়। এদিকে, গত তিনদিন সীমান্তে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবির সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, সীমান্তে যদি কোন ঘটনা ঘটে সেখানে বিজিবির কাজ ওটা লক্ষ্য রাখা এবং সতর্ক থাকা ও সীমান্ত পাহারা দেয়া। উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনা ঘটেনি। দুদিন আগে আমরা সীমান্তে অস্থিরতা দেখেছি। সে তুলনায় সীমান্তের অবস্থা এখন অনেক ভালো এবং শান্ত। আমাদের সতর্ক থাকা দরকার। সীমান্তে বিজিবির সদস্যগণ সবসময় সতর্ক আছে। এখন পর্যন্ত আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি হয়নি। তেমন কিছু হলে আমাদের প্রস্তুতি আছে, আমরা লক্ষ্য রাখবো। আমাদের মাতৃভূমিতে কোন সমস্যা হবে না।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মূল বাধা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কৌশলগতভাবে কিছুটা সামরিক চাপ সৃষ্টি করা দরকার বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আদিল চৌধুরী বলেন, ‘এরা অন্যায় করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, এরা দুর্বল। এরা যেকোনো সময়ে, যেকোনো পরিস্থিতিতে পিছু হটবে- এটাই স্বাভাবিক।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত ছয়মাসের বেশি সময়ের ভেতরে মিয়ানমার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে দেশটির সামরিক সরকারের উপরেও চাপ সৃষ্টি করা দরকার বলে মনে করছেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের মতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মূল বাধা দেশটির সেনাবাহিনী।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের উপরে যেগুলো হয়েছে, সেগুলো তো মিয়ানমার সেনাবাহিনীই করেছে। তাদের কাছেও যদি একটা কড়া বার্তা পৌঁছানো যায়, কূটনীতির পাশাপাশি, তাহলে আমার মনে হয়, এই সমস্যাটার আশু সমাধান হবে।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে কর্নেল (অব) ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘যেসমস্ত রোহিঙ্গারা এসেছে, যাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, সুতরাং এটা আন্তর্জাতিক প্রেশারে এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনী অবশ্যই দুর্বল।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের সৈন্যরা যতোই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করুক না কেন, মানসিকভাবে তারা খুবই দুর্বল। যে কারণে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ সত্ত্বেও বিজিবির টহল ব্যবস্থা দেখে তারা সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। আর এভাবে যদি বাংলাদেশ ক্রমাগত তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে কৌশলগতভাবে অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবে।

পাঠকের মতামত: