ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

নিষিদ্ধ তামাক চাষে নির্বিকার প্রশাসন

Chakaria_Picture__14-01-2016_(1)[1]কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কৃষি অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বেড়ে চলেছে রামুর বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিকর তামাকের আবাদ ও উৎপাদন। নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলাধীন বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সর্বনাশা তামাকের আগ্রাসন বেড়েই চলেছে। রামু ও নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে বনভূমি ও বাঁকখালী নদীর বুক অবাধে চলছে সর্বনাশা তামাক। রামু উপজেলাতে বিভিন্ন তামাক কোম্পানীর প্রলোভনে পড়ে চাষীরা পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
এতে উপজেলার কৃষি সম্ভাবনাময় মিষ্টি আলু, গোলআলু, কাচামরিচ, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, টমেটো, বেগুন, খিরা, ধানসহ সব ধরনের রবি শষ্য উৎপাদন ষাট শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ উপজেলায় সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক মাত্র কয়েক একর জমিতে তামাক চাষের হিসাব দেখালেও বাস্তবে অনেক বেশি জমিতে নির্বিঘেœ তামাক চাষ চালিয়ে যাচ্ছে।
এই বছর রামু ও নাইক্ষ্যংছড়িতে তামাক চাষের জমির পরিমাণ চার হাজার একরের বেশি হবে বলে জানালেন গর্জনিয়ার তামাক চাষী মো: ইসমাইল। এলাকাবাসী জানায়, বিভিন্ন তামাক কোম্পানীর লোভনীয় ফাঁদে পা দিয়ে অনেক কৃষক তামাক চাষে ঝুঁঁকে পড়ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে উপজেলায় বছর বছর খাদ্য উৎপাদনে জমির পরিমাণ কমে যাবে।
এদিকে এবছর তামাক চাষের মৌসুম শুরুর আগেই রামু উপজেলার পক্ষ থেকে বনভূমিতে তামাক চাষ না করার জন্য মাইকিং করা হয়েচে।
অথচ সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, কচ্ছপিয়ার নাপিতেরচর ও কচ্ছপিয়ার বিভিন্ন বনভূমির বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে চলছে তামাকের চাষ। চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছরী ইউনিয়ন, ঘুমধুম, সোনাইছড়ি, বাইশারী ইউনিয়নের ক্যাংগারবিল বড়ছরা, রামু উপজেলার বাঁকখালী নদীর দুই তীরে এবং কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন, কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়ায় তামাকের সর্বনাশা আগ্রাসনে আবাদি জমি দখল করে ফেলেছে। যার ফলে শাক সবজিসহ রবি শষ্য আবাদ প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলে বর্তমান মৌসুমে তামাক কোম্পানীর প্রতিনিধিরা আগাম অর্থ প্রদানের নামে দাদন দিয়ে চাষীদের বিভিন্ন লোভ লালসা দেখিয়ে ক্ষতি কারক সর্বনাশা তামাক চাষের দিকে বিস্তার ঘটাচ্ছে। আগে যে সব জমিতে ধান, মরিচ, বেগুন, আলু, টমেটো, ধনিয়া পাতা, ভুট্টা, জুয়ারী, ছনফুল, ফেলন, শিমসহ বিভিন্ন শাক সবজি উৎপাদন হতো, এখন সে সব জমিতে তামাক চাষে ছেয়ে গেছে। তামাক চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আবাদি জমি কমে যাওয়ায় কৃষি খাদ্য এখন নিরাপত্তার চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
গর্জনিয়ার এক সচেতন যুবক হাফেজ জানান, এই এলাকায় দিন দিন তামাক চাষ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনে উপজেলায় চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি তামাক চাষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে কাঁচা তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছে বনের কচি কাঁচা কাঠ। এতে সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের মূল্যবান বৃক্ষরাজী উজাড় করে ফেলছে বন দস্যুরা।
এবিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আখম শাহরিয়ার বলেন, বর্তমানে তামাক চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও আমরা চেষ্টা করছি তা কমিয়ে আনার। তামাক চাষের পরিবর্তে উক্ত ফসলি জমিতে অন্যান্য খাদ্য শষ্য রোপনের জন্য চাষীদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া তামাক চাষের ক্ষতি ও কুফল সম্পর্কেও কৃষকদের ধারণা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: