বান্দরবান প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ঠকিয়ে হাজার হাজার গবাদিপশু আয়ত্বে নেওয়া দালালরা প্রশাসনের নজরে পড়েছে। বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই তাদের চিহ্নিত করেছেন। এইসব দালালদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান, একাধিক ইউপি সদস্যসহ অন্তত শতাধিক নাম রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ২৫ আগষ্ট নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের চাকঢালা বড়ছনখোলা, চেরারখালের আগা, আশারতলী সাপমারাঝিরি, ফুলতলী এবং ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, বাইশফাড়ি, রেজু আমতলী পয়েন্ট দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। জিরো পয়েন্টে আশ্রিত এসব রোহিঙ্গাদের একমাত্র সম্ভল গরু-ছাগল দেখে একশ্রেণীর দালাল চক্র হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা প্রশাসনের নমীনতার সুযোগে ত্রাণ দেওয়ার নাসে রোহিঙ্গাদের ঠকিয়ে ও হয়রাণির মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে গরু-ছাগল গুলো অতি অল্প দামে কিনে নেয়। অনেক স্থানে রোহিঙ্গাদের গরু চুরি সহ তাদের স্বর্ণলংকার নিয়ে অসহায় ও বাস্তুহারা মানুষগুলোর উপর অমানবিক অত্যাচার করা হয়।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের আশারতলী গ্রামের আলী হোসেন মেম্বার, বিছামারা গ্রামের আলী আহমদ মেম্বার, ছোট জামছড়ির মোক্তার আহমদ, মোহাম্মদ আলী, আশারতলী জামছড়ি গ্রামের সাবের হোসেন, আমির হোসেন, আলী হোসেন, সৈয়দ কাশিম, প্রধানঝিরির সিরাজ মিয়া, জামছড়ির আবুল কালাম, আবদুর রহিম ধলাইয়্যা, আবদুর রহমান, মসন আলী, শামসুল আলম, আবদুর রহমান, সাপমারাঝিরির আক্তার মিয়া, আশারতলীর আবদুল গফুর, প্রধানঝিরির ইমাম হোসেন, জালাল আহমদ, হাসন আলী, চেরারকুলের জামাল আবেদীন। ঘুমধুমের আজুখাইয়া গ্রামের আজাদ, বড়বিলের আবু কালাম, হারুনুর রশিদ, উখিয়া রাজাপালংয়ের মুজিব উদ্দিন, মো: দিয়া, উত্তর ঘুমধুমের দানু বড়–য়া, বাইশফাড়ির মো: আলম, ভাজাবনিয়ার আলম, মো: ইজ্জত আলী, বাইশফাড়ির উলা তংচঙ্গ্যা, কামতু মং তংচঙ্গ্যা, অংচিথোয়াই তংচঙ্গ্যাসহ শতাধিক ব্যাক্তি কৌশলী রোহিঙ্গাদের কাছ টকিয়ে গবাদিপশু নিয়েছেন। এদের মধ্যে আবার অনেকে মিয়ানমারের ভিতরে ঢুকেও গরু-ছাগল নিয়ে এসেছেন। তবে এসব ব্যাক্তিদের মতে, রোহিঙ্গারা গোখাদ্য সংগ্রহ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে গরু-ছাগল বিক্রি করেছে। ঠকিয়ে নয়, স্বল্প মূল্যে গরু কিনার কথা স্বীকার করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাকঢালা ও ঘুমধুমের কয়েকজন সচেতন নাগরিক জানান- জিরো পয়েন্ট থেকে পাহাড়ী পথে গরু এনে ইউনিয়ন পরিষদের টোল ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে বৈধ করেছেন চোরাকারবারীরা। সে ক্ষেত্রে গরু বিক্রয়ের চাদাঁর একটি অংশ জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যাক্তি ও এক শ্রেণীর প্রশাসনের কাছেও গেছে। যদিওবা নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি গত ২৫ আগষ্ট থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা প্রায় শতাধিক গরু বালুখালী শুষ্ক কাষ্টমে জমা করেছেন।
জানতে চাইলে, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপির ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার ফয়েজ উল্লাহ জানান, বিজিবির কঠোরতার মাঝেও গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া, কাউয়ারখোপসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কম মূল্যে গরু কিনেছে অনেকে। কিন্তু ষ্পষ্ট কারা এ কাজটি করেছে তাদের পরিচয় নিশ্চিত নই।
দালাল চক্রের বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচএম তৌহিদ কবির বলেন- মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ঠকিয়ে গবাদিপশু নেওয়া ব্যাক্তিদের নাম ইতিমধ্যে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যেই জড়িত থাক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: