সি এন ডেস্ক ::
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছে জামায়াতে ইসলামী –এমন আলোচনা এখন দলটির নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। কেউ বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থিতা করার সিদ্ধান্ত বহাল থাকলেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দলের বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামায়াতের সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ৭নং ধারায় রোকন হওয়ার শর্তাবলি সম্পর্কে বলা হয়েছে। ওই ধারার ৫ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘এমন কোনও পার্টি বা প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পর্ক না রাখেন যাহার মূলনীতি, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ইসলামের আক্বিদা এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং কর্মনীতির পরিপন্থী।’
এই উপধারায় বর্ণিত শর্ত অনুযায়ী, ধানের শীষ প্রতীক গ্রহণ করে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী হওয়ার মধ্য দিয়ে জামায়াতের প্রার্থীদের দলের সদস্য পদ অক্ষত থাকার বিষয়েই প্রশ্ন উঠেছে। গঠনতন্ত্রের ধারা বলছে, রোকনিয়াত বা সদস্যপদ লাভের ক্ষেত্রে অন্য কোনও পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলেই কেবল রোকনিয়াত অর্জিত হয়।
সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা, যাদের মধ্যে ২৫ জন ইতোমধ্যে বিএনপির নির্বাচনি প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর বাইরে প্রায় ২৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থিতা করার প্রত্যয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বুধবার। বিএনপি-জোটের সমর্থনপ্রাপ্ত হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের মধ্যে দলের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, আনম শামসুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় আরও কয়েকজন নেতা রয়েছেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলছেন, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের কোনও সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকা এবং মার্কা বাতিল হওয়ায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্তেই ধানের শীষ প্রতীক গ্রহণ করা হয়েছে।
জোটের সমর্থনপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধানের শীষ প্রতীক নিয়েছি, এটা তো নির্বাচনের জন্য একটা আইন। আমরা বিএনপির সঙ্গে জোট করেছি, নির্বাচন করছি। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে চলেছি। এতে করে দলীয় অস্তিত্ব, দলীয় স্বাতন্ত্র্য, দলের আদর্শ, দলের সদস্যপদ কেটে যায়নি। এখানে তো ওই আইন নাই, এক্ষেত্রে এটা নির্বাচনি আইন। একটি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোটে থাকার ক্ষেত্রে এই আইন মানতে হচ্ছে। তাতে করে দলীয় সংবিধান লক্ষ্য, উদ্দেশ্য লঙ্ঘিত হচ্ছে না। আমাদের দল আছে, এটা নির্বাচনি রাজনীতির জোট একটা, সে হিসেবে এখানে কোনও সমস্যা নাই।’
জামায়াতের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ মনে করছেন, বিগত নির্বাচনে ত্রিশের ওপরে আসনে জোটগত মনোনয়ন পেলেও এবার তা নেমে এসেছে পঁচিশে। সেক্ষেত্রে দলের স্বার্থরক্ষা যেমন হয়নি, তেমনি বৈশিষ্ট্যও ক্ষতির মুখে পড়লো।
২০০১ সালে চারদলীয় জোটের ব্যানারে ৩১টি, এর মধ্যে জোটবদ্ধভাবে ৩০টি এবং এককভাবে একটিতে নির্বাচন করে জামায়াত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৯টি আসনে জোটগত সমর্থন পেলেও চারটি থেকে দলীয়ভাবে নির্বাচন করেন জামায়াতের প্রার্থীরা।
এ বছর ৫০ জনের তালিকা দিলেও শেষপর্যন্ত ২৫টিতে জোটগত মনোনয়ন পান দলটির প্রার্থীরা। আরও চারটিতে জোটের সমর্থন পাওয়ার আশায় রয়েছে জামায়াত।
ঢাকা মহানগরের একজন কর্মী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধানের শীষে নির্বাচন করার কারণ ছিল, বিএনপি রিস্ক নিতে চায় না। সেক্ষেত্রে বেশি সংখ্যক আসন প্রাপ্তির সম্ভাবনা ছিল। যদিও ধানের শীষ প্রতীকে রাজি হলেও জোটগত মনোনয়নে পিছিয়ে আছে জামায়াত। ফলে বড় হয়ে প্রশ্ন উঠছে, প্রতীকও গেল, প্রার্থীও গেল, তাহলে প্রাপ্তি কী?’
এ বিষয়ে জামায়াতের কয়েকজন দায়িত্বশীলের সঙ্গে কথা হলে ভিন্ন ভিন্ন মত দেন তারা। কেউ বলেন, এটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। আবার কেউ বলছেন, সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থিতা। আবার কারও ভাষ্য, ধানের শীষ প্রতীক নেওয়ার মধ্য দিয়ে দলীয় প্রার্থীরা এখন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা আমির একেএম শামসুদ্দিন বলছেন, ‘গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘনের কোনও বিষয় এখানে নেই। বিশেষ করে বিএনপির যে লক্ষ্য, ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি তাদের যে গঠনতান্ত্রিক বিশ্বাস, সে হিসেবে বড় কোনও তাৎপর্য বহন করে না। এটা গঠনতন্ত্রের শর্তের মধ্যে পড়বে না। এটা তৃণমূলের দাবি, নির্বাচন করতে হবে।’
-বাংলা ট্রিবিউন
পাঠকের মতামত: