ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

তাপদাহ লবণ চাষীদের জন্য ‘আশীর্বাদ’

দেশে লবণ উৎপাদনে ৬২ বছরের রেকর্ড

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: তীব্র গরমে এখন মানুষ আর প্রাণিকুলের নাভিশ্বাস উঠলেও লবণ চাষিদের চলছে পৌষ মাস! তাপদাহের কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে দৈনিক রেকর্ড পরিমাণ ৩৩ থেকে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হচ্ছে। এতে দেশে লবণ উৎপাদনে এ বছর ৬২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদন কেন্দ্র কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা। চলতি মৌসুমে গত মঙ্গলবার দেশে ৬২ বছরের লবণ উৎপাদনের রেকর্ড ভেঙেছে।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) জানিয়েছে, এ মৌসুমে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৮ লাখ ৩৯ হাজার মে. টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। গত মৌসুমে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার মে. টন। বিসিকের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ, রামু ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। এ বছর লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। শুষ্ক মৌসুমে নোনা পানির সাহায্যে এখানে লবণ উৎপাদন করা হয়। একসময় সনাতন পদ্ধতিতে চাষ হলেও এখন মাঠে পলিথিনের সাহায্যে আধুনিক প্রযুক্তিতে লবণের চাষ করা হচ্ছে।

লবণ চাষিরা বলছেন, লবণ উৎপাদনের মৌসুম ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৬ মাস সময় ধরা হলেও মূলত ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসেই বেশি লবণ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে বৈশাখ মাসের তীব্র গরমে অন্য মাসের তুলনায় দুই থেকে তিনগুন লবণ উৎপাদন হয়।

বিসিকের হিসেব মতে, চলতি মৌসুমের গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। তবে এরপর ১১ দিনে অন্তত ২ লাখ ৩৯ হাজার মে. টন উৎপাদন হয়েছে। পুরো বৈশাখ মাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেশের ২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণের বার্ষিক চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। চাষিরা বলছেন, গত ২০ মার্চ ও ২ এপ্রিল দুইবার বৃষ্টিতে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। একবার বৃষ্টি হলে মাঠে পুনরায় উৎপাদনে যেতে ৫ থেকে ৭ দিন সময় লেগে যায়।

বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, তীব্র দাবদাহ কক্সবাজারের লবণ চাষিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এখন দৈনিক ৩৬ হাজার মেট্রিক টন করে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে, যা মৌসুমের সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন। মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪১০ থেকে ৪২০ টাকায়। বিসিক কক্সবাজার লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, চলতি মৌসুমে লবণ চাষের জমি ও চাষি বেড়েছে। চাষিদের ঋণ ও কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি আধুনিক উৎপাদনেও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

কক্সবাজার–২ (মহেশখালী–কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, চলতি মৌসুমে লবণের বাম্পার উৎপাদনের পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। শুরুতে মণপ্রতি লবণ ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হলেও মাঝখানে লবণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দাম কমিয়ে ২৫০ টাকায় নিয়ে গিয়েছিল। এখন মাঠ পর্যায়ে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা দাম রয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লবণ আমদানি বন্ধ রেখে প্রান্তিক লবণ চাষিদের সর্বোচ্চ দাম পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: