এম.এ আজিজ রাসেল ::
মাধ্যমে জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও জাতীয় সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম (সিপিপি) এর নেতৃত্ব দানকারী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় (এমওডিএমআর)—এর কর্মকর্তাগণ কমিউনিটি—ভিত্তিক সাইক্লোন আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমস্ বা সাইক্লোনের প্রাক—সতর্কীকরণ পদ্ধতির ওপর এক পাঠ্যসূচি চালু করেছেন। শুক্রবার (১৩ আগষ্ট) কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসিন।
সিপিপি’র ডিরেক্টর আহমাদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ মোহাম্মদ রেজওয়ান হায়াত, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, কক্সবাজারে ডব্লিউএফপি’র ইমার্জেন্সি কোঅর্ডিনেটর শিলা গ্রুডেম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো—ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর এএসএম মাকসুদ কামাল। এসময় ব্র্যাকের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসিন বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে আমাদের জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার সবচেয়ে উত্তম পথ হলো জরুরি অবস্থা মোকাবেলার পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন কিছু নয়, স্বাধীনতার আগে হওয়া সাইক্লোন ভোলা থেকে শুরু করে ২০২০ সালে সাইক্লোন আম্ফান ও এর মধ্যে হওয়া অনেক বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের মানুষ জলবায়ু বিষয়ক ধাক্কার ক্ষেত্রে নিজেদের সহনশীলতা প্রমাণ করেছে। ১৯৭০ সাল থেকে জীবন বাঁচাতে ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সময় কমিয়ে আনতে বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রটৌকল তৈরি হয়ে এসেছে। যার একটি হলো আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমস্ বা প্রাক—সতর্কীকরণ পদ্ধতি প্রবর্তন করা, যা দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসকরণের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটির মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ ও জনগোষ্ঠী সম্ভাব্য কোনো দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাবে।
তিনি আরও বলেন, ইউনাইটেড স্টেটস্ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) ও ব্র্যাক—এর হিউম্যানিটেরিয়ান লিডারশিপ একাডেমির সহায়তায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ডব্লিউএফপির পারস্পরিক সহায়তায় তৈরি করা ট্রেনিং ও এই ম্যানুয়ালটির লক্ষ্য হলো, স্বেচ্ছাসেবীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যেন যেসব উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম চালু আছে, সেখানের জনগোষ্ঠীর মানুষদেরকে তারা আগে থেকেই আরও ভালোভাবে সতর্কতামূলক তথ্য দিতে পারে। ডব্লিউএফপি ও ইউএসএআইডিকে তাদের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যার মাধ্যমে এই পাঠ্যসূচি বাস্তবে রূপ লাভ করতে যাচ্ছে।”
কক্সবাজারে ডব্লিউএফপি’র ইমার্জেন্সি কোঅর্ডিনেটর শিলা গ্রুডেম বলেন, “এই পাঠ্যসূচি প্রণয়নে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাক—সতর্কতামূলক পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটবে ও যেসব মানবিক সংস্থা জরুরি অবস্থায় সাড়াদানের জন্য নিয়োজিত আছে, তাদের জন্য একটি মূল্যবান রিসোর্স বা সম্পদ হিসেবে কাজ করবে।”
সিপিপি—এর ডিরেক্টর আহমাদুল হক বলেন, “এই নতুন পাঠ্যসূচির কল্যাণে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীন ও ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষদের ওপর দুর্যোগের তীব্র প্রভাবের কারণে সহনশীলতা বৃদ্ধি ও দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার বিষয়গুলোকে ডব্লিউএফপি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে ডব্লিউএফপির দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে ইউএসএআইডি—এর সহায়তায় ৭০টি সাইক্লোন শেল্টার সংস্কার করা হয়েছে। সেগুলোতে যাওয়ার ব্যবস্থা সুগম করতে রাস্তা, সেতু ও কালভার্টের উন্নয়ন করা হয়েছে।
জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সংস্থা। আমরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবিক সংস্থা যা জরুরি অবস্থায় মানুষের জীবন রক্ষা করছে এবং খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে সংঘাত, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারকৃত মানুষের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনছে।
পাঠকের মতামত: