মহেশখালী সংবাদদাতা:
চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের হামলায় মহেশখালী প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুব রোকন, তার দুই ভাই ছৈয়দুল করিম (৩৮) ও মাওলানা রেজাউল করিম (৪০) আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারী) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বড় মহেশখালীর নতুন বাজারস্থ সাংবাদিক মাহবুব রোকনের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা নুরুদ্দিন মাসুদ নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে দাবী করেছে আহতদের পরিবারের সদস্যরা।
আহত দু্ই ভাইয়ের মধ্যে ছৈয়দুল করিম ঢাকাস্থ মহেশখালী সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। অপর ভাই মাওলানা রেজাউল করিম বড় মহেশখালী সংসদের সভাপতি ও উখিয়া গুরামিয়া গ্যারেজ জামে মসজিদের খতিব।
তাদের অবস্থাজনক হওয়ায় এই দুইজনকে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজারে প্রেরণ করেছে। ঘটনায় জড়িত কেউ আটক হয়নি।
সাংবাদিক মাহবুব রোকন জানান, সকালে তাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেন তিনি। এসময় অতর্কিতভাবে মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা নুরুদ্দিন মাসুদের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে বন্দুক, লাটি, দা ও কিরিচ নিয়ে মাহবুব রোকনের উপর হামলে পড়ে। খবর পেয়ে তার ভাইয়েরা এগিয়ে আসে। এগিয়ে আসলে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনভাইয়ের উপর হামলে পড়ে। এক পর্যায়ে সবাইকে ব্যাপক মারধর কওে সন্ত্রাসীরা। মারধরে তিনজনই আহত হয়। তবে দুই ভাইয়ের অবস্থা গুরুতর হয়। এসময় তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে বং প্রতিষ্ঠানের মালামাল লুটপাট করে। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসী ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় ব্যাপক ভাংচুর চালায়। শেষে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে বীরদর্পে চলে যায়।
বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার পাশা চৌধুরী ও মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল কালামকে জানানো হয়। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। পরে আহত সাংবাদিক মাহবুব রোকনসহ অন্যদের উদ্ধার করে মহেশখালী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, মাহবুব রোকনের পৈত্রিক জমিতে স্থাপিত ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দখল করে দেয়ার জন্য দখলবাজ চক্রের ভাড়াটে হিসেবে মোটা টাকার বিনিময়ে মাসুদ পরিকল্পিত এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। ওই জমিটি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে মাহবুব রোকনের পরিবার ভোগ দখল করে আসছে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনায় পুরো উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইয়াবা ক্যাডার খ্যাত কর্মীবিচ্ছিন্ন নুরুদ্দিন মাসুদের সন্ত্রাসী দলের এই হামলার সময় ছাত্রলীগ তথা অন্য অংগ ও সহযোগী সংগঠনের কেউ জড়িত ছিলেন না। ছাত্রলীগের অনেকেই এই নির্লজ্জ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মাসুদ মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের ৫ নং যুগ্ম-আহ্বায়ক। সে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তাফার ভাইপো বলে জানা গেছে। চাচা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তাফার নাম ব্যবহার করে কুখ্যাত মাসুদ একের পর এক সন্ত্রাসী প্রক্রিয়ায় অঢেল সম্পাদের মালিক হয়েছে।
এই বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক হালিমুর রশিদ বলেন, ‘দখল ও লুটপাট, বিরোধ বাধানো ছাত্রলীগের কাজ নয়। এই ঘটনা সাথে মহেশখালী ছাত্রলীগের কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা নেই।’
যুগ্ম-আহবায়ক পরওয়ার হাবিব মোস্তফা বকুল বলেন, ‘শান্তি-শৃঙ্খলা ও প্রগতির ধারক-বাহক ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ কোনো সহিংসতা করতে পারে না। যদি কেউ ছাত্রলীগের নাম দিয়ে করে থাকে তবুও তারা ছাত্রলীগ নয়। এই ঘটনার দায় আমরা নেবো না।’
যুগ্ম-আহবায়ক মোবারক হোসেন বারেক বলেন, ‘ছাত্রলীগ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সাথে জড়িত নয়। ছাত্রলীগ নেতার এই ঘটনার দায়ভাব ছাত্রলীগ নেবে না।’
আহ্বায়ক ওয়াজেদ আলী মুরাদ বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক ও অপ্রত্যাশিত। বিষয়টি বসে সমাধান করার চেষ্টা করছি আমরা।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, ‘নুরুদ্দীন মাসুদ বিবাহিত। সে ছাত্রলীগের সাথে কোনোভাবেই জড়িত নেই। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি সে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার অনেক অপকর্ম করছে। একইভাবে সাংবাদিক রোকন ও তার দুইভাইয়ের উপর হামলা চালিয়েছে সে। এই জন্য আমি নিন্দা জানাচ্ছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তাফার জানান, কোন আত্মীয়-পরিজনের অন্যায় কাজে আমার সমর্থন নেই। এই হামলার ঘটনারও তার কোনো সমর্থন নেই তিনি শপথ করে এই ঘটনার বিষয়ে তার বিন্দু পরিমানেও সমর্থন নেই। এসব বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বরং তার আত্মীয় স্বজনের এমন বির্তকিত আচরণে বিব্রত বলে জানান। তিনি হামলা ও লুটপাটের এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ নিয়ে আইনগত উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন। এবং সাংবাদিক মাহবুব রোকনের পক্ষে যা করতে হয় করবে বলে আশ্বস্থ করেন।
এই ঘটনায় মহেশখালী প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তার হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দিলে আন্দোলনে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে। এই বিষয়ে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেবো।
পাঠকের মতামত: