ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

দালালচক্রের কোটি টাকাসহ আত্মগোপনে দুই সার্ভেয়ার

জসীম উদ্দীন, কক্সবাজার ::কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার বেশ কিছু চিহ্নিত দালালের দেয়া কমিশনের টাকাসহ আত্মগোপনে চলে গেছে দুই আলোচিত সার্ভেয়ার। এ নিয়ে টেনশনে পড়েছে দালাল ও সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিকরা।
এদিকে, বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) টাকার কুমির খ্যাত সার্ভেয়ারদের বাসায় র‍্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দুর্নীতিগ্রস্তদের রাজ্য।
এ সময় নগদ ৫ লাখ ৫৫ হাজার ঘুষের টাকাসহ আটক হন সার্ভেয়ার ওয়াসিম। তার দেখানো তথ্য মতে, সার্ভেয়ার ফরিদ উদ্দীনের শহরের বাহারছড়ার বাসা থেকে ৬১ লাখ ২০ হাজার ৫৫০ টাকা, অপর সার্ভেয়ার মোঃ ফেরদৌস খানের তারাবনিয়ারছড়া বাসা থেকে ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করে র‍্যাব।
তবে, ফরিদ উদ্দীন ও মোঃ ফেরদৌস খান এখনো পলাতক রয়েছে। আটক সার্ভেয়ার ওয়াসিমকে র‍্যাব-১৫ এর নায়েব সুবেদার মো হারুনুর রশিদের দায়েরকৃত মামলায় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে আরো অন্তত ৫ জনকে। সার্ভেয়ার ওয়াসিম পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দলিল উদ্দিনের ছেলে।
অভিযান চলাকালে সার্ভেয়ার ফেরদৌস ও ফরিদ উদ্দীন পালালেও দুই জনের বাসা থেকে ঘুষের টাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি ও ডকুমেন্ট উদ্ধার হয়।
এদিকে, সার্ভেয়ার ওয়াসিম আটকের পর সার্ভেয়ার ফেরদৌস ও ফরিদ উদ্দীনের আত্মগোপনের কারণে বিপদে পড়েছে দালালচক্র। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
এদের মধ্যে মোঃ আলাউদ্দীন নামের এক দালালকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানিয়েছে, ঘুষের টাকাসহ আটক সার্ভেয়ার ওয়াসিম, পলাতক ফেরদৌস ও ফরিদ উদ্দীনের কাছে তাদের কয়েক কোটি টাকা অগ্রীম রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের চেক নিশ্চিত করতে এসব টাকা অগ্রীম ঘুষ হিসেবে দিয়ে রেখেছিল তারা। অনেকেই অগ্রীম টাকা বাবদ ভূমি অধিগ্রহণের চেক পাশ হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় চেক পায় নি।
ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দীর্ঘদিন ধরে দালালির সঙ্গে জড়িত একজনের দাবি, তিন সার্ভেয়ারের হাতে বিভিন্ন দালাল চক্রের ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্রীম রয়েছে। ঝামেলা ছাড়া চেক নিশ্চিত করতে টাকাগুলো অগ্রীম দেয়া হয়। সার্ভেয়ারদের দেয়া টাকার বাবদ কিছু কাজও শেষ হয়েছে। আর কিছু শেষ পর্যায়ে।
তবে, সার্ভেয়ার ওয়াসিম আটক ও দুই সার্ভেয়ার আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় অসম্পন্ন কাজ যেমন বাধাগ্রস্ত হতে পারে তেমনি টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে তাদের শঙ্কা রয়েছে।
সক্রিয় আরেক দালালের দাবি, আটককৃত ওয়াসিমকে তিনি ১০ লাখ টাকা অগ্রীম দিয়েছেন। পালাতক সার্ভেয়ার ফরিদ উদ্দীনের হাতে রয়েছে ৫৪ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব দালাল চক্রের সদস্যরা একদিকে যেমন অগ্রীম দেয়া টাকা নিয়ে চিন্তিত, তেমনি গ্রেফতার আতঙ্কও রয়েছে অনেকের।
তবে, ভূমি অধিগ্রহণের টাকায় কোটিপতি বনে যাওয়া দালালদের মধ্যে আতংক থাকলেও টাকার বিনিময়ে আত্মরক্ষার আত্মবিশ্বাসও রয়েছে।

পাঠকের মতামত: