ঢাকা,শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

থামছেনা শিশুশ্রম, পেকুয়ায় স্বল্প পারিশ্রমিক নিয়ে ইটভাটায় শিশুরা

এম দিদারুল করিম, পেকুয়া ॥

প্রতিদিন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশুদের নিয়োগ করে ইটভাটায় চলছে শ্রমিকের কাছ। শিশু শ্রমিকের আইনকে তোয়াক্কা না করে ইটভাটার মালিকরা স্বল্প পারিশ্রমিক দিয়ে শিশুদের মাধ্যমে কাজ তুলে নিচ্ছে ইটভাটায়। আর এতে অধিক লাভবান হচ্ছে ইটভাটার মালিকরা। তবে থমকে যাচ্ছে শিশুদের আগামী দিনের জিবন যাত্রার মান। প্রশ্ন থেকে যায় এর জন্য দায়ী কে?
প্রতিনিয়ত কক্সবাজারের পেকুয়ায় ইটভাটায় ৩০/৩৫ জনের মত ৮ থেকে ১৫ বছরের শিশু শ্রমে নিয়োজিত। সারা দিন তারা ইটভাটায় সাজাচ্ছে ইট। কিছু শিশু ট্রলিতে ভরছে ইট। আবার কিছু শিশু ট্রলিতে করে পিকআপ-ট্রাকে (পরিবহন) তুলে দিচ্ছে ইট। কাজ আর কাজ। কাজের জন্য কথা বলা বারণ। একজন আরেক জনের সাথে কথা বললে বেতন কর্তন। মালিকের কঠোর নির্দেশ রয়েছে কারো সাথে কথা বলা যাবেনা। মালিকপক্ষ ইটভাটায় ৫০জনের অধিক শিশুর লেখাপড়া বাদ দিয়ে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করেছে। ইটভাটায় শিশুদের দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করালেও স্থানীয় প্রশাসন ছিল নিরব ভূমিকায়।
এসব শিশুর স্বপ্ন পুড়ছে পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের নাপিতখালী এলাকার আহমদ নবীর মালিকনাধীন এবিএম ইটভাটায়।
সোমবার (৭ জানুয়ারী) দুপুরে সরোজমিনে এবিএম ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ভাটায় শ্রমিকের সঙ্গে শিশুরাও কাজ করছে। ওদের বয়স ৮ থেকে ১৫ বছরের বেশী নয়। কয়লার পরিবর্তে সংরক্ষিত বনের কাঠ পুড়ানো হচ্ছে দেধারছে। ফসলি জমি গভীরভাবে খনন করে সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। মাটি ব্যবহার করা হলেও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারি সংস্থা নিরব বলে জানায় স্থানীয়রা। নির্বিচারে ফসলি জমি কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্যও হারাচ্ছে।
এ সময় কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব শিশুর কেউ কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীতে পড়ছে। আবার কেউ কেউ এখন আর বিদ্যালয় থেকে ঝওে পড়া শিশু। কেউ নিজে থেকেই, আবার কেউ মা-বাবার সঙ্গে ইটভাটার কাজে শ্রম দিচ্ছে। কাঁচা ইট রোদে শুকানো, ইট তৈরি, ট্রলিতে করে ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো, মাটি বহন করাসহ সব কাজেই নিয়োজিত এসব শিশু-কিশোর।
কাজ করা কয়েকজন শিশুর সাথে কথা বলতে চাইলে তারা সরাসরি বলেন, মালিক ও তাদের সর্দারের বারণ রয়েছে।
বেতন কত জানতে চাইলে কাজ করা শিশুরা বলেন, ৬ মাসে প্রতিজনকে ২৫ থেকে ৩০হাজার টাকা মুজুরি দেয়া হয়।
বড় মিয়া নামের শ্রমিকদের সর্দার বলেন, এসব শিশু তাদের পিতা মাতার সাথে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে। তারা ইটভাটায় কাজ করেনা। তবে পিতা মাতাকে কাজের সহযোগিতা করে থাকে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, বিগত ২বছর আগেও এবিএম ব্রিকসে অভিযান চালিয়ে তাৎক্ষনিক ২৫ শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করেছিল নির্বাহী কর্মকর্তা। শিশু শ্রম বন্ধ করতে মালিক আহমদ নবীকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে চলছে। এছাড়াও প্রশাসনের নিরব ভূমিকাও সন্দেহের চোঁখে দেখছে পরিবেশবিদরা।
এবিএম ব্রিকসের মালিক আহমদ নবী বলেন, আমার ইটভাটাতে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। পিতা মাতার সাথে তারা আমার ইটভাটায় থাকে। সেখানে হয়তোবা পিতা মাতার কাজে তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি গতবছর কক্সবাজারের একটি অভিজাত হোটেলে শিশুশ্রম নিরসন ও বাংলাদেশ সরকারের (শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের) উদ্যোগে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত ‘শুকটি মাছ সেক্টরে শিশু শ্রম নিরসন’ বিষয়ক প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতি মন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন শিশুশ্রম নিরসনে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও তার যথার্থ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব। শিশুশ্রম নিরসনে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।
এদিকে এখনো শিশুশ্রম বন্ধে আইনগত প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কুম্ভ কর্নের ঘুম ভাংগেনি। ফলে এখনো পেকুয়াসহ জেলার সব কয়টি উপজেলায় শিশু শ্রমিকরা কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব-উল-করিম বলেন, শিশু দিয়ে কাজ করার ঘটনায় যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, শিশু শ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোন ইটভাটায় শিশু শ্রম ব্যবহার হলে তা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: