অনলাইন ডেস্ক ::
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান নিয়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। অন্যদিকে, নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষিপ্ত মিছিল করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
জ্বালিয়ে দেয়া পুলিশের পিকআপ ভ্যানটির নম্বর ২৩১১। এসি, মতিঝিল গাড়িটি ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের পিকআপ ভ্যানটি জ্বালিয়ে দেয়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়।
সংঘর্ষে নারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে ফিরোজা বেগম নামে এক নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, বেলা আড়াইটায় সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। অন্যদিকে বিজয়নগর মোড়ে এপিসি ও জলকামানসহ অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
বেলা আড়াইটার পরও ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তিনি বলেন, পুলিশ শুধু তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলেছিল, যেন যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু তারা সে কথা না শুনে হঠাৎ পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পরে তারা আমাদের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। আমাদের কয়েকজন সদস্যও আহত হন।
‘এখন পর্যন্ত পুলিশ ধৈর্য-সহকারে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
পল্টন থানার ওসি মাহমুদ হোসেন জানান, নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনের সড়কে নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করছিল। পুলিশ তাদের সুশৃঙ্খলভাবে থাকতে অনুরোধ করে। কিন্তু বিনা উসকানিতে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
বেলা দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে দেয়া আগুন নেভাতে কাজ শুরু করেন।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, বিনা উসকানিতে মনোনয়ন ফরম নিতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর সরকার পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্বাচন কমিশন পুলিশ দিয়ে এ হামলা চালাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন দাবি করেন, মিজানুর রহমান ও ফিরোজা বেগম নামে এক নারী বন্দুকের গুলির ছররার আঘাতে রক্তাক্ত হন। এছাড়া আরও ১০ নেতাকর্মী আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি-না তা নিয়ে শুরু থেকে নানা মত ছিল। এর মধ্যে ১১ নভেম্বর রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়। এর পরদিন মনোনয়ন ফরমও বিক্রি শুরু করে বিএনপি। মনোনয়ন ফরম বিক্রির শুরুর দিন থেকেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
এর মধ্যে গতকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার সময় শোডাউন করা নির্বাচনী আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে এমনটি না করতে সতর্ক করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির আদেশে বলা হয়, ‘তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা জমা দেয়ার সময় মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনসহকারে মিছিল ও শোডাউন করা হচ্ছে, যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী আচরণ বিধিমালা ২০০৮-এর ৮ নম্বর বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ইসির এ আদেশ আসার পরদিনই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। ভয়াবহতার চূড়ান্ত মাত্রা ছাড়িয়েছিল বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনাগুলো। তবে ওই নির্বাচন বর্জন করার পর ধীরে ধীরে আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে বিএনপি। এরপর ওই নির্বাচনের বছরপূর্তি ঘিরে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশের রাজ্যনৈতিক পরিস্থিতি।
এরপর সময়ের সাথে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিভিন্ন দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসছিল বিএনপি।
পাঠকের মতামত: