আমান উল্লাহ কবির, টেকনাফ:
দীর্ঘ চার বছর পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল টেকনাফ উপজেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল আগামী শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পর সম্মেলন হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। ওই কাউন্সিলে টেকনাফ উপজেলা যুবদলের কান্ডারী কে হচ্ছেন এ নিয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল ঘরনা কর্মী সমর্থকদের মাঝে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। বিশেষ করে একটি পরিবার কেন্দ্রীক থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন বেরিয়ে আসবে কিনা এনিয়েও ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। প্রতিটি পদে একাধিক প্রার্থী থাকলেও কাউন্সিল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেক নেতা কর্মীদের। তবে সংশয় থাকলেও কমিটি নতুন রূপে আসতে পারে বলে নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে শনিবার উপজেলা যুবদলের সম্মেলন ও কাউন্সিল হবে বলে জানা গেছে।
সীমান্ত নগরী টেকনাফ হচ্ছে বিএনপি অধ্যুষিত একটি উপজেলা। এ উপজেলার আনাচে কানাচে রয়েছে বিএনপি তথা উখিয়া-টেকনাফের বর্ষিয়ান নেতা ও চার বারের নির্বাচিত সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর হাজার হাজার সমর্থক। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন ও শাহজাহান চৌধুরীকে ঘিরে বর্তমানে টেকনাফের বিএনপি ঘরনা সমর্থকদের মাঝে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আগামী শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টেকনাফ উপজেলা যুবদলের কমিটির কান্ডারি ও পরিধি কেমন হবে তা নিয়ে চলছে সাধারন এবং তৃণমুল নেতা কর্মীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা। ইতিমধ্যে সভাপতি পদে বর্তমান আহবায়ক এড হাসান ছিদ্দিকী, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর পুত্র জুনায়েদ চৌধুরী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক আবদুল আমিন আবুল, মোঃ কাইয়ুম ও ছাত্রনেতা জালাল আহমদের নাম কর্মী সমর্থকদের মাঝে শুনা যাচ্ছে। সাধারন সম্পাদক পদে উপজেলা ছাত্রদলের বর্তমান সফল সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, যুবদলের যুগ্ন সম্পাদক আবুল কালাম সিকদার, সেলিম ও জিয়া পরিষদের সভাপতি মুরাদ হোসেন জিয়া এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বাহারছড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মোঃ ইলিয়াছ, সাবরাং ইউনিয়ন যুবদলের সাধারন সম্পাদক জাহেদ উল্লাহ’র নাম কর্মী সমর্থকদের মাঝে শুনা যাচ্ছে।
এদিকে একাধিক যুবদলের কর্মী সমর্থকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ ব্যালটের মাধ্যমে টেকনাফ উপজেলা যুবদলের আগামী কান্ডারী নির্বাচিত করলে ঝিমিয়ে পড়া কর্মীদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসবে। শুধু তাই নয় বিএনপির চেয়ারপার্সন ও দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে এই কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের থাকা খুবই জরুরী বলে অনেকে নেতা কর্মীরা মত প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক যুবদল কর্মী বলেন, চাপিয়ে দেওয়া কমিটি কেউই মানবেন না। কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলে তা সকলে মেনে নেবে।
সাধারন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধী টেকনাফ উপজেলা ছাত্রদলের সফল সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, তৃণমুল নেতা কর্মীদের মতামতে প্রার্থী হতে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনসহ বিগত যে কোন আন্দোলনে ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্বে দিয়ে স্বৈরচারী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে পিছপা হয়নি। শুধু তাই নই ম্যাডাম যখন রোহিঙ্গাদের দেখতে আসেন, তখন টেকনাফ উপজেলা ছাত্রদলের শোডাউন দেশব্যাপী আলোচিত ছিল। কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া টেকনাফের গনমানুষের নেতা শাহজাহার চৌধুরীর নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ। তিনি যাহা সিদ্ধান্ত দিবেন মেনে নিয়ে জিয়ার আদর্শের সৈনিক হয়ে রাজপথে থাকব।
সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ও যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক আবদুল আমিন আবুল বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুষ্টু, শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর কাউন্সিল হলে তিনিই সভাপতি নির্বাচিত হবেন। কোন মতেই চাপিয়ে দেওয়া কমিটি মানা হবেনা। তবে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফের অভিভাবক শাহজাহান চৌধুরীর সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
টেকনাফ উপজেলা যুবদলের সম্মেলন ও কাউন্সিলের ব্যাপারে আহবায়ক এড. হাসান ছিদ্দিকীর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও হাউজ এবং নেতাকর্মীদের মতামতকে অগ্রাধীকার দিয়ে একটি সুন্দর কমিটি উপহার দেওয়া হবে। যারা রাজপথে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছেন এবং ভবিষ্যতেও যুবদলের কান্ডারী হিসেবে কাজ করবে এমন একঝাঁক জিয়ার সৈনিকদের হাতে সুন্দর কমিটি তুলে দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আর প্রতিদ্বন্ধীতা করবেন না বলেও জানান। উল্লেখ্য, টেকনাফ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটি বিগত ২০১৪ সনে গঠিত হয়েছিল। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার জেলার সহদপ্তর সম্পাদক, টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক পদে দায়িত্বে আছেন।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য ও টেকনাফ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদত হোসেন জানান, পরিবার তান্ত্রিক বেষ্টনি থেকে দলকে রক্ষার জন্য ইহা একটি সুন্দর সময়। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। সেই আন্দোলনে ভুমিকা রাখতে পারে একমাত্র যুবদল। এজন্য তারুন্য নির্ভর জিয়ার আদর্শের সৈনিকদের দিয়ে একটি সুন্দর ও সাংগঠনিক মনোভাবের কমিটি টেকনাফ উপজেলায় জরুরী।
এদিকে চার বছর পর যুবদলের সম্মেলনকে ঘিরে নেতা কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসলেও অতীতে টেকনাফ উপজেলা যুবদল গণতান্ত্রিকভাবে গঠন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই এই কাউন্সিলও যেন পকেট কিংবা চাপিয়ে দেওয়া কমিটি না হয় সেজন্য উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন নাম না বলার শর্তে অনেক নেতা কর্মীরা।
এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর কাছে মুটোফোনে জানতে চাইলে তিনি নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে আশ্বস্থ করে বলেন, তৃণমুল নেতা কর্মীদের মতামতকে মুল্যায়ন করে একটি সুসংগঠিত এবং সবার পছন্দ কমিটি উপহার দেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: