জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :: সাংবাদিককে গালিগালাজের কারণে কক্সবাজারের টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরুকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (২৫ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, তাকে (টেকনাফের ইউএনও) ওএসডি করার নির্দেশ দিয়েছি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরুর ভাষা মাস্তানের চেয়েও খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সাংবাদিককে ইউএনওর অকথ্য ভাষায় গালাগালি দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য বলে জানান সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্ট বলেছেন, একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে এমন অশ্লীল শব্দ কাম্য নয়।
এরপর ইউএনও’র গালিগালাজের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে কথা বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিককে এ তথ্য আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
গত রোববার (২৪ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। সাংবাদিককে গালাগালি সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
তিনি জানান, হাইকোর্ট বলেছেন- একজন ‘রং হেডেড’ মানুষ শুধু এরকম গালিগালাজ করতে পারে। ইউএনও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা মাস্তানের ভাষার চেয়েও খারাপ। হাইকোর্ট বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার আচরণ এমন হতে পারে না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তারা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তারাও যদি কোনও অপরাধ করেন, তাহলে সে বিষয়ে প্রেস কাউন্সিল আছে। সেখানে অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, আইন আছে। এভাবে গালিগালাজ তো কেউ করতে পারেন না।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে খবর প্রকাশের জেরে কক্সবাজারের সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে দাপ্তরিক মুঠোফোন নম্বর থেকে কল করেন ইউএনও কায়সার। এসময় তিনি খবর প্রকাশের কারণ জানতে চেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। ঘটনাটি ২১ জুলাই রাত পৌনে ১০টার। গালিগালাজের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। ওই অডিওতে ইউএনওকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই কত বড় সাংবাদিক হইছস? তুই তো টেকনাফের প্রতিনিধি না।’
ওই সময় সাইদুল ফরহাদ নিজেকে জেলা প্রতিনিধি পরিচয় দিলে ইউএনও তাকে বলেন, ‘কীসের জেলা প্রতিনিধি? সেদিন তোর বাবা যিনি আসছিল, যে তোর পরিচয় দিছিল, সেই জন্য তোর ফোন আমি ধরেছিলাম। তুই যা লিখছস, পুরোটাই মিথ্যা।’ সে সময় সাংবাদিক ফরহাদ ইউএনওকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?’
তখন ইউএনও বলেন, ‘তোর সঙ্গে যে আমি কথা বলতেছিলাম, তখনও তো আমি ওই স্পটে ছিলাম ব্যাটা। তুই যে নিউজটা করছস, সেটা মিথ্যা…তুই বলছস যে, ঘর পানিতে ভাসছে। তুই যখন আমাকে ফোন দিছস, তখনও আমি স্পটে ছিলাম। আমার সিনিয়র স্যার ছিল।’
এদিকে গালাগালির অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন ইউএনও কায়সার খসরু।
পাঠকের মতামত: