ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ পর্যটন নগরী কক্সবাজার

coxsকক্সবাজার প্রতিনিধি :::

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের মহোৎসব চলছে। একশ্রেণির অবৈধ দখলদার চক্রের যোগসাজশে পরিবেশ আইন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে নামসর্বস্ব শতাধিক  ডেভেলপার কোম্পানি এমন দালানকোঠা নির্মাণের মহোৎসবে  মেতে উঠেছে। সরেজমিন জানা যায়, সরকারি খাসজমি, বিরোধপূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ও নির্বিচারে পাহাড় কেটে সমতল করে এসব ভবন নির্মাণ করে চলেছে চক্রটি। এ ছাড়া নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বৃক্ষনিধন, জলাশয় ভরাট চলছেই। এ অবস্থায় দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজার ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) সূত্র জানায়, কক্সবাজারে আর কোনো অপরিকল্পিত ভবন না হয় সে জন্য কাজ করছে কউক। সৈকত তীরের ৩০০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না-এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সীমানার মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করলে ব্যবস্থা  নেবে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। শিগগিরই খুঁটি স্থাপন করে সমুদ্রসৈকতের সীমানাও নির্ধারণ করে দেওয়ার কাজ করছে কউক। উল্লেখ্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৬ সালের মার্চে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক)  গেজেট অনুমোদন হয়। জানা যায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা (৫) অনুযায়ী তৎকালীন সরকার কক্সবাজারের সৈকত সংলগ্ন এলাকাকে পরিবেশগত কারণে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে  ঘোষণা করে। ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরিবেশ আইনকে উপেক্ষা করে ২০০৩ সালে সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন ১৩০ একর সরকারি খাসজমি অন্তর্ভুক্ত করে হোটেল-মোটেল জোন গড়ে তোলে এবং প্লট  তৈরি করে তা বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বরাদ্দও দেওয়া হয়। বর্তমানে পর্যটন ব্যবসার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে নামসর্বস্ব শত শত ডেভেলপার কোম্পানি কক্সবাজার সৈকত এলাকার মূল্যবান পাহাড় এবং জমির মালিকদের বিভিন্ন প্রকার  লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে কৌশলে তা হাতিয়ে নিচ্ছে এবং যত্রতত্র বহুতল দালান নির্মাণ করে পর্যটন নগরীকে ঠেলে দিচ্ছে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে। কোনো রকম সমীক্ষা না চালিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ এবং খবরের কাগজে ও টিভিতে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাজার হাজার গ্রাহককে চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় ভূমির গঠন অত্যন্ত নাজুক। ফলে নির্মাণাধীন এসব ভবন যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অপরিকল্পিতভাবে এসব ভবন নির্মাণ একসময় কক্সবাজারবাসীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি কোটি  কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে এমন ধারণাও উড়িয়ে দিচ্ছে না অনেকে। তাদের মতে, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ বন্ধ না হওয়ায় সরকার ঘোষিত ‘এক্সক্লুসিভ পর্যটন নগরী’ হিসেবে সমুদ্রসৈকতকে গড়ে  তোলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যত্রতত্র নিম্নমানের বহুতল ভবন নির্মাণ, অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন না করে ভবন নির্মাণ, নকশা অনুমোদন নিলেও তা না মেনে ভবন নির্মাণ, নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে ভবন নির্মাণ, নির্মাণ কাজে ত্রুটি ইত্যাদি কারণে ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সরেজমিন জানা যায়, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের নগরী কক্সবাজারকে আধুনিকায়ন করতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাহাড়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অতি জরুরি অক্সিজেন সরবরাহকারী গাছ কেটে বনাঞ্চল সাবাড় করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত বহুতল ভবন। নেই কোনো উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। একটু বৃষ্টি হলেই সরু ড্রেনগুলো পাহাড় কাটা মাটি এসে ভরে যায়। শহরে যত্রতত্র দখল-বেদখল আর ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এতে একদিকে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এ পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে কক্সবাজারে মারাত্মকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে। পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। অভিযানে কয়েকজন শ্রমিক পাওয়া  গেলেও প্রকৃত দোষীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। ফলে দোষী তথা হুকুমদাতাদের ধরা যাচ্ছে না। একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে গেলে।

পাঠকের মতামত: