নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার :::
কক্সবাজার জেলার রাজনীতি ধীরে ধীরে নির্বাচন মুখী হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দরা অনেক আগে থেকে নির্বাচনী আমেজে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালালেও পিছিয়ে ছিল বিএনপি। সম্প্রতি বিএনপির নেতৃবৃন্দরাও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ও কর্মকান্ড বৃদ্ধি করেছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের এ সব কর্মকান্ডকে সাধারণ মানুষ অনেকটা নির্বাচনী কার্যক্রম বলেই ধরে নিচ্ছেন।
নির্বাচন মূখী হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের রাজনীতি। জেলার ৪টি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে একাধীক প্রার্থী তৎপরতা চালালেও মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসন ছাড়া অন্য তিনটি আসনে মনোনয়ন প্রতিযোগীতা নেই বিএনপিতে। এ ছাড়াও জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও ইতোমধ্যে তারা একটু নড়ে চড়ে বসেছেন। প্রকাশ্যে চালাচ্ছেন সাংগঠনিক তৎপরতা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছে জামায়াত।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে প্রার্থী নিয়ে কোন প্রতিযোগীতা নেই বিএনপিতে। ঠিক উল্টো পরিস্থিতি বিরাজ করছে আওয়ামী লীগে। কিন্তু ৭৩ সালের পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগ জয়ের মুখ দেখেনি। কিন্তু এবার আসনটি জয় পাবার জন্যই প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ। তাই পরিচ্ছন্ন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে দল থেকে এটি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম। যার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও দখলবাজির অভিযোগ আছে এমন ব্যক্তির মনোনয়ন পাওয়ার কোন সম্ভবনা নেই।
এ আসনে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে ৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ৯১,৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ডঃ আশরাফুল ইসলাম সজিব ও জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ মিতুন। এ দিকে জামায়াত থেকে আরিফুল রহমান চৌধুরী মানিক প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।অপরদিকে বিএনপি থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী সাবেক সাংসদ হাসিনা আহমদই প্রার্থী হবেন। তবে জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান সাংসদ হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা নিশ্চিত। জাতীয়পাটি (জেপি) থেকে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি এম.এইচ আরমান চৌধুরী প্রার্থী হচ্ছেন ।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ আসন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাসে বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন মহেশখালীতে। প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত প্রকল্প নির্বিঘেœ বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। মহেশখালী উপজেলা থেকে অন্তত ১৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়াধীন থাকলেও সাংসদের সাথে স্থানীয় লোকজনের সম্পৃক্ততার সুবাদে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। দীর্ঘদিন এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ না থাকায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকার বহুমূখী উন্নয়ন হয়েছে। তিনি গত সাড়ে ৩ বছরে যোগাযোগ ও শিক্ষার অগ্রগতিকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেছেন । ২০০৮ সালে সহজ বিজয় হাত ছাড়া হওয়ার পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আশার আলো দেখতে পায় আওয়ামী লীগ। আগামি সংসদ নির্বাচনে আশেক উল্লাহ রফিক এমপি আবারো মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আরো যারা মনোনয়ন চাইতে পারেন তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডঃ সিরাজুল মোস্তফা, সহ-সভাপতি এডঃ ফরিদুল ইসলাম, ডঃ আনসারুল করিম, সাবেক ছাত্রনেতা মোঃ ওসমান গণী। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন কেন্দ্রিয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক কবির আহমদ সওদাগর, কেন্দ্রীয় নেতা মুহিব উল্লাহ। বিএনপি থেকে দলের মনোনয়ন কে পাবেন তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সাবেক সাংসদ আলমগীর ফরিদ ও সাবেক সাংসদ এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী। জামায়াতের মনোনয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন সাবেক সাংসদ বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা হামিদুর রহমান আজাদ।
কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর ও রামু) আসনে ৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তৎমধ্যে একই পরিবারের রয়েছে ৩ জন। প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কানিজ ফাতেমা আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনিন সরওয়ার কাবেরী ও রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। তবে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে কোন টেনশন নেই। দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রিয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রিয় সদস্য এডঃ মোহাম্মদ তারেক, জেলা জাপা সেক্রেটারি মফিজুর রহমান ও রুহুল আমিন সিকদার। জামায়াতের সমর্থন নিয়ে যেকোন একজন প্রার্থী শক্তভাবে প্রতিদ্বন্দীতা করবেন এমন আভাস দিয়েছেন জামায়াতের একজন শীর্ষনেতা।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রার্থীর তালিকায় আছেন একাধিক প্রার্থী। মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান বদি, সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী একমাত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপি সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী।
পাঠকের মতামত: