ঢাকা,সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

জমকালো আয়োজনে পর্দা উঠলো রিও অলিম্পিকের

bbজমকালো আলোকসজ্জা আর জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠলো বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাকর ক্রীড়া আসর রিও অলিম্পিকের। ফুটবলের ‘মক্কা’ ব্রাজিলে অলিম্পিককে স্বাগত জানালো হাজারো মানুষ।

‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত রিও অলিম্পিকের উদ্বোধন হল বিশ্বখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে। অলিম্পিকের ৩১তম আসরটি বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর ৫টায় শুরু হয়।

স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৭৮ হাজার সৌভাগ্যবান ছাড়াও বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ টেলিভিশন সেট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই রিও অলিম্পিকে অংশ নেয়া ২০৬টি দেশের মোট ১১ হাজারেরও বেশি অ্যাথলিটের মার্চ পাস্ট অনুষ্ঠান। এ প্যারেডেতে সবার আগে থাকে অলিম্পিকের জন্মদাতা দেশ গ্রিস। বাকি দলগুলো বর্ণানুক্রমিকভাবে মার্চ পাস্টে অংশ নেয়।

শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও সুরের তালে তালে নানা রঙের সাজপোশাকে আর সাম্বা নৃত্যে জাতীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলেন স্থানীয় শিল্পীরা। বিভিন্ন ধাপে তাদের পরিবেশন মুগ্ধতা ছড়ায় স্টেডিয়ামে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ব্রাজিলের তিন খ্যাতনামা সিনেমা পরিচালক আনদ্রুচা ওয়াডিংটন, ফার্নান্দো মেইরিলেস (দ্য কনস্ট্যান্ট গার্ডেনার, সিটি অব গড) ও দানিয়েল্লা থমাস।

তিন ঘণ্টা ৩৭ মিনিটব্যাপী উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নাচ-গানে মাতিয়ে তোলেন ব্রাজিলের দুই সেরা স্টেজ পারফরমার সংগীতশিল্পী আনিত্তা ও গিলবার্তো জিল।

পরক্ষণেই রিলে দৌড়ের মাধ্যমে স্টেডিয়ামে অলিম্পিক মশাল নিয়ে প্রবেশ করেন দৌড়বিদরা। তবে শেষ ব্যক্তি হিসেবে মশাল প্রজ্বালন করার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে অলিম্পিকের মশাল জ্বালাতে অপারগতা জানান তিনবার বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে। এ ছাড়া রিও অলিম্পিক নিয়ে নিজেরই সুর করা ‘এসপেরানকা’ শিরোনামে গানটিও গাওয়া হলনা তাঁর। ফলে অলিম্পিকের মশাল জ্বালান ভান্দারলেই দে লিমা।

অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করা হয় অলিম্পিকের মাসকট ‘ভিনিশাস’। পুরো অনুষ্ঠানে ছিল নাচ, অ্যাক্রোবেটিকস ও গানের সমন্বয়ে ব্রাজিলিয়ান মার্শাল আর্ট ‘ক্যাপোয়েইরা’-এর প্রদর্শন, যা ফুটিয়ে তুলেছে ব্রাজিলের জাতীয় ঐতিহ্য ও বিশেষ নৃত্য ‘সাম্বা’-কে।

অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের গর্ব আমাজন বনের সৌন্দর্যকে তুলে ধরা হয় বেশ চমৎকারভাবে। বানর, ম্যাকাউ পাখি আর বৃষ্টির শব্দ ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে আমাজনকে সারা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করে ব্রাজিলিয়ানরা। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে থাকে বিশেষ পারফরম্যান্স।

তাছাড়া অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন স্থানীয় শিল্পী ক্যারোল কনকা, পপ তারকা লুডমিলা, শিল্পী গিলবার্তো গিল ও ব্রাজিলের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কায়েতানো ভেলোস। তাদের পরিবেশনের মূর্ছনায় পুরো স্টেডিয়াম যেন দুলে ওঠে। লেজার প্রদর্শনীর মাধ্যমে পুরো স্টেডিয়ামে সৃষ্টি করা হয়েছে আলোর ইন্দ্রজাল।

এখানেই শেষ নয়, ব্রাজিলের বিখ্যাত বোসা নোভা জ্যাজ সংগীতের তালে তালে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন দেশটির সাবেক টপ মডেল জিজেলে বুনচেন। মিউজিসিয়ান পাওলো জোবিমের পিয়ানোর সুরে তাল মিলিয়ে তিনি প্রদর্শন করবেন ব্রাজিলিয়ান নারীদের স্বকীয়তাকে, যার আরেক নাম ‘গার্ল অব ইপানেমা’।

অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হয়ে পতাকা বহন করবেন দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান। এ ছাড়া আর্চারীতে অংশ নিচ্ছেন শ্যামলী রায়। শুটিংয়ে আব্দুল্লাহেল বাকী, গলফে সিদ্দিকুর রহমান, সাঁতারে মাহফিজুর রহমান সাগর ও সোনিয়া আক্তার, স্প্রিন্টে শিরীন আক্তার ও মেসবাহ আহমেদ রিওতে প্রতিনিধিত্ব করবেন বাংলাদেশের।

চোখ ধাঁধানো নৃত্য আর মনোমুগ্ধকর সঙ্গীতে শিল্পীরা তুলে ধরেছেন ব্রাজিলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। পাশাপাশি অলিম্পিকে অংশ নেওয়া দেশগুলোর সংস্কৃতিও সবাইকে চমকে দেয়।

 

পাঠকের মতামত: