বাম থেকে : মণীষা ভট্টাচার্য, তামান্না জাহান তমা ও শান্তা দাশ।
চট্রগ্রাম বিনোদন ডেস্ক ::’
শান্তা, মণীষা ও তমা। সীতাকুণ্ডের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অতি পরিচিত তিনটি নাম। যেখানে গান সেখানেই থাকে তাঁদের উপস্থিতি। তাঁরা গান করেন আর মুগ্ধ হয়ে শোনেন দর্শক। দীর্ঘদিন ধরে গান শুনে তাঁদের ভক্ত হয়ে গেছেন অনেকে। সীতাকুণ্ডের এমন কোনো মঞ্চ নেই, যেখানে তাঁরা গান করেননি। গান গেয়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আর টেলিভিশনেও। জিতেছেন অনেক পুরস্কার। শুধু গান নয়, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা এবং কবিতা আবৃত্তি করেন তাঁরা।
শিল্পী শান্তা দাশের বাড়ি সীতাকুণ্ড পৌরসদরের মধ্যম মহাদেবপুরে। তিনি ওই এলাকার রিগান দাশের স্ত্রী।
সীতাকুণ্ড ডিগ্রি কলেজ থেকে তিনি এবারের বিবিএস পরীক্ষার্থী। শান্তার গানই প্রাণ। স্বামী, সন্তান, সংসার সামাল দিয়ে গানের টানে ছুটে যান দূর-দূরান্তে। যেখানে গানের আমন্ত্রণ পান সেখানেই যান শান্তা। তাঁর কণ্ঠে ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত গন্ধ বিলিয়ে যাই’ গানটি এলাকায় বেশ জনপ্রিয়।শান্তা বলেন, ‘পরিবারের বাবা, কাকা, জেঠা সবাই শিল্পী। কাকা গান গাইতেন বেশি। তাঁদের দেখাদেখি গানের প্রতি ভালোলাগা, ভালোবাসা। আট বছর বয়সে গানে হাতেখড়ি দাশপাড়ার শিল্পী শুভ্রা চৌধুরীর কাছে। পরে শিল্পী হাশেম, নির্মল, বিজন নন্দী ও সুজন ভট্টাচার্যসহ অনেকের কাছে গান শিখেছি। ’
শান্তার প্রথম পছন্দ আধুনিক গান। এছাড়া রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, ফোক গানও চর্চা করেন। শান্তা বলেন, ‘সংসারে স্বামী, সন্তান সবাইকে ম্যানেজ করে সংগীতচর্চা অনেক কঠিন। তবু স্বামী রিগান দাশের সাপোর্ট থাকায় গান গেয়ে যেতে পারছি। ’
তিনি গান করেছেন যমুনা টেলিভিশন, সিটিভিসহ অনেক মঞ্চে। শিশু বয়সে উপজেলা পর্যায়ে সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়াসহ অনেক পুরস্কার জিতেছেন তিনি। শান্তার স্বপ্ন, একদিন সব সীমানা পেরিয়ে তাঁর গান ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে। সেদিনই তাঁর জীবন সার্থক হবে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে মঞ্চ মাতানোর বহু গুণ রয়েছে শিল্পী মণীষার। সীতাকুণ্ড পৌরসদরের দক্ষিণ মহাদেবপুর গ্রামের মিলন ভট্টাচার্য ও মেরি ভট্টাচার্যের কন্যা তিনি। মণীষা শুধু সংগীতশিল্পী নন, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, বিতর্কসহ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। আধুনিক গানের পাশাপাশি রবীন্দ্র সংগীতকে সমান গুরুত্ব দেন মণীষা ভট্টাচার্য। গুণী এই শিল্পী বলেন, ‘চার বছর বয়সে গানে হাতেখড়ি হয় শিল্পী সুজন ভট্টাচার্যের কাছে। পরে বিজন নন্দীর কাছেও গান শিখেছি। ’
তিনি সীতাকুণ্ডে সব সংগীত অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান করার পাশাপাশি ডাক পেলে ছুটে বেড়ান পুরো চট্টগ্রাম। নগরীর মুসলিম হল ও ডিসি হিলের মঞ্চে গান গেয়ে দর্শকের মন জয় করেন।
মণীষা চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। গানের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও মন দিতে হচ্ছে তাঁকে। তবু গান চলছে গানের মতোই। ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত সংগীতে বহু পুরস্কার বিজয়ী তিনি। খেলাঘরের হয়ে পুরস্কার জিতেছেন চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ‘পার্লামেন্ট’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। মণীষা অনুষ্ঠান উপস্থাপনায়ও পারদর্শী।
সংগীতাঙ্গনে বিচরণে বাবা মিলন ভট্টাচার্য ও মা মেরী ভট্টাচার্যের দারুণ সহযোগিতার কথা জানিয়ে এই শিল্পী বলেন, ‘গান নিয়ে অনেক স্বপ্ন আছে। কিন্তু বর্তমানে সাংস্কৃতিক জগতেও কিছু হীনমন্যতা দেখা যায়। শিল্পীদের নিয়ে টানা হেঁচড়া করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এতে শিল্পীরা বিরক্ত হয়ে দূরে চলে যেতে চান। সবাইকে এসব সংকীর্ণতার উপরে উঠতে হবে। তাহলেই যথার্থ সাংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ ফিরে আসবে। ’
শান্তা, মণীষার মতো সংগীতকে আঁকড়ে ধরে আছেন তামান্না জাহান তমা। তাঁর বাড়ি মিরসরাইয়ে ইছাখালীতে। তবে থাকেন সীতাকুণ্ড পৌরসভার চৌধুরীপাড়া এলাকায়। গান করার পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের আলপনা সঙ্গীত একাডেমিতে গান শেখান তিনি। তমা বলেন, ‘শুরুতে আবৃত্তিই ছিল আমার ধ্যানজ্ঞান। ’ ছয় বছর বয়সে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে আবৃত্তি করার সময় সীতাকুণ্ডের সংগীত গুরু অরিন্দম চক্রবর্তীর নজরে আসেন। তিনি গলা শুনে গানের স্কুলে তমাকে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন অভিভাবকদের। তাঁর পরামর্শ মতো মা তাঁকে গানে উৎসাহিত করেন। শিল্পী অরিন্দম চক্রবর্তীর কাছে গান শেখা শুরু। রবীন্দ্র সংগীত, দেশাত্মবোধক, আধুনিক গান তমার বেশি পছন্দ। এছাড়া অন্য গানও করেন। সীতাকুণ্ড ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামে সংগীত বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বহু পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
তমার বাবা আবু হানিফ ও মা নাসিমা আকতার দুজনই সরকারি চাকরিজীবী। তমা বলেন, ‘মা চাকরি থেকে এসে আমাকে যথেষ্ট সময় দেন। অনুষ্ঠানের জন্য গান বেছে দেন, অনুষ্ঠানে সাথে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মা-বাবার সমর্থন এবং শিল্পী প্রবাল দেবনাথের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারছি। ’
সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজ থেকে সামনে এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন তমা। বলেন, ‘সঙ্গীত আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে চাই। ’
শান্তা, মণীষা ও তমা তিনজনই সংগীতগুরু প্রদীপ ভট্টাচার্য ও আলপনা সংগীত একাডেমির পরিচালক সাংবাদিক শেখ সালাউদ্দিন এবং অধ্যক্ষ শিল্পী হাসেমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সামনে আরো এগিয়ে যেতে তাঁরা অতীতের মতো আগামী দিনেও সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
সীতাকুণ্ড সংগীত একাডমির পরিচালক সংগীতগুরু প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘শান্তা, মণীষা ও তমা তাদের নিজ গুণে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক সুনাম অর্জন করেছে তারা। তবে সংগীত অনেক বড় একটি ক্ষেত্র। এখানে শেখার কোনো শেষ নেই। ওদের ভুলত্রুটি শুধরে দিয়ে তাদের আরো ভালো গান গাইতে সহযোগিতা করছি। ভবিষ্যতেও করব। তাদের জন্য আমার আশীর্বাদ ও শুভ কামনা রইল। তারা আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ’
পাঠকের মতামত: