ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলা সাহিত্যের সূতিকাগার- কক্সবাজারে বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক

বিজ্ঞপ্তি :

বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক প্রফেসর ড. শামসুজ্জামান খান বলেছেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলা সাহিত্যের সূতিকাগার। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা কবি আবদুল হাকিম চট্টগ্রামের বাসিন্দা, “কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” বিখ্যাত কবিতার রচয়িতা মাহবুবুল আলম চৌধুরী চট্টগ্রামের মানুষ, জয় বাংলার পুরোধা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চট্টগ্রামের মানুষ। কক্সবাজার চট্টগ্রামের আওতাধীন এলাকা হিসেবে কক্সবাজারের কবি-সাহিত্যিকদের শরীরে সেই রক্তের ধারাই প্রবাহিত। সে কারণেই কক্সবাজারেও প্রতিভাবান কবি-সাহিত্যিক জন্ম নিয়েছে। এসব প্রতিভাবান কবি-সাহিত্যিকদের সম্মানিত করে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

‘কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী’ বর্ষপূর্তি ও একাডেমীর সাহিত্য পুরস্কার প্রদান ও সম্বর্ধনা প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ১৩ মে ২০১৮ রবিবার বিকেলে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর জাফর আহামদ ও কক্সবাজার আইন কলেজ প্রাক্তন অধ্যাপক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ।

প্রধধান অতিথি আরো বলেন, গুণিজনকে সম্মান প্রদান না করলে গুণির জন্ম হয় না। কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী সঠিক সময়ে গুণিজনদেরকে সম্মাননা প্রদান করে সমাজকে দেখিয়ে দিলো।

প্রধান অতিথি বলেন, মফস্বল শহর কক্সবাজারে সাহিত্য একাডেমী অনেক গুলো কাজ করে সমাজকে এবং ভবিষ্যত বংশধরদেরকে আলোকিত করার কাজে অগ্রণি ভূমিকা পালন করছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, শিক্ষর্থীরা এখন জিপিএ-৫ বা গোল্ডেন জিপিএ-৫-এর পছেনে ধাবিত। এতে করে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরকে প্রকৃত শিক্ষার জন্য বেশি বেশি বই পাঠ করতে হবে এবং লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর জাফর আহামদ বলেন, বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির কারণে শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির সুফল যেমন আছে কুফলও আছে। মোবাইলের বদৌলতে শিক্ষার্থীরা কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়ের লাইব্রেরির ছায়াও মাড়ায় না। এটা কোনো অবস্থাতেই ভালো লক্ষণ নয়। আমি সাহিত্য একাডেমীর শিশুদের প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে এসে দেখিছি শিশুরা ইচ্ছে করলে কত সুন্দর সুন্দর সাহিত্য রচনা করতে পারে। যে বা যারা সাহিত্য চর্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তারা কোনো অবস্থাতেই মাদকের দিয়ে বা সমাজের অপরাধ জগতের দিকে যেতে পারে না। তাই প্রত্যেক অভিভাবকেই শিশুদের প্রতি নজর রাখা উচিত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার আইন কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক কবি-এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাহিত্য একাডেমীর কর্মকর্তারা দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সরকারি কোনো অনুদান ছাড়া একাডেমীর কর্মকা- চালিয়ে এসেছেন এটা কম গৌরবের নয়। মানুষ যেখানে সাহিত্য বিমুখ হচ্ছে, বই বিমুখ হচ্ছে সেখানে একাডেমীর কর্মকর্তারা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিশু-কিশোরদেরকে বইমুখী করা এবং সাহিত্য চর্চার প্রতি মনোযোগী করতে পেরেছে এটা একটা বিরাট সাফল্য।

কবি হাসিনা চৌধুরী লিলি ও কবি শামীম আকতারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিসেস লুৎফুন্নেছা শুভেচ্ছা বক্তব্য পেশ করেন।

কক্সবাজারের তৃণমূলের সন্তান ছড়াকার, গবেষক, শিক্ষক ধনীরাম বড়–য়া ২০১৫ সালের, কবি-সম্পাদক অমিত চৌধুরী ২০১৬ সালের ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিক্ষাবিদ, কথা সাহিত্যিক, কবি, গবেষক প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ২০১৭ সালের জন্য কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী প্রতিষ্ঠার পর থেকে কক্সবাজার জেলার বিদগ্ধ কবি-সাহিত্যিকদেরকে এই পুরস্কার প্রদান করে আসছে।

সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত সংবর্ধিত ব্যক্তিবর্গ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

সংবর্ধিতজনদের সম্মাননা পাঠ করেন যথাক্রমে কবি হাসিনা চৌধুরী লিলি, নূর মোহাম্মদ ও সোহেল ইকবাল। এর আগে প্রধান অতিথি সংবর্ধিতদেরকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং ক্রেস্ট ও সনদ হস্তান্তর করেন।

একাডেমীর ৪১৫ তম পাক্ষিক ১৮ মে

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪১৫ তম পাক্ষিক সাহিত্য সভা আগামী ১৮ মে ২০১৮, শুক্রবার সকাল ৯ টায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রয়াত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিন্সের জীবনালেক্ষ নিয়ে আলোচনা করা হবে। অনুষ্ঠানে একাডেমীর সংশ্লিষ্ট সকলসহ জেলার কবি-সাহিত্যিক, সাহিত্যামোদিদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল আহবান জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: