ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া লামায় পাহাড় কেটে ইটভাটা

জহিরুল ইসলাম :
চকরিয়া, পেকুয়া ও বান্দরবানের লামার ফাইতংয়ে এক্সকেভেটর দিয়ে নির্বিচারে পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। পাহাড়ের এসব মাটিগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে ৩৫টি ইটভাটায়। কিছু কিছু ইটভাটা তৈরী করা হয়েছে পাহাড় কেটে বনাঞ্চলের ভেতরে। প্রতি বছর এভাবে ইটভাটায় মাটি যোগান দিতে পাহাড় কেটে ফেলায় পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। বৃষ্টির পানির সাথে পাহাড়ী মাটি ও বালি নেমে ছোট ছোট খাল গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতি বছর চকরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যাসহ পরিবেশের নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। ওই এলাকায় পাহাড় ধসে অনেক প্রাণ হানির ঘটনাও আছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়; কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং, সুরাজপুর-মানিকপুরে ৪টি, পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ও টৈটংয়ে ৪টি, চকরিয়ার বনাঞ্চল ঘেঁষেই লামা উপজেলার ফাইতংয়ে রয়েছে ২৩টি ও লামার ফাঁসিয়াখালীতে রয়েছে ৪টি ইটভাটা। এসব ইটভাটা গুলো বেশীরভাগই অবৈধ ও বনাঞ্চলের ভেতরে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়; ফাইতং এলাকায় আবহমান কাল থেকে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা পাহাড় কেটে মাটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখানে পাহাড় কাটতে এক্সকেভেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন কোন ইটভাটা তৈরী করা হয়েছে এক্সকেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটেই। চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বানিয়ারছাড়ার আধা কিলোমিটার পূর্বে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নে ২৩টি ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটা গুলোর বেশীরভাগই পাহাড় কেটে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ইটভাটায় ইট তৈরীতেও মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড় কেটে নিয়ে। ওই এলাকা থেকে পাহাড় কেটে মাটি চকরিয়ার ইটভাটা গুলোতেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে নির্বিচারের পাহাড় কেটে ফেলায় পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এলাকাবাসি জানায়; বর্ষার সময় পাহাড়ের আলগা হয়ে যাওয়া মাটি গিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে পাহাড় থেকে সৃষ্ট ছোট ছোট খালগুলো। এতে বর্ষায় একটু বৃষ্টি হলেই চকরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হচ্ছে। বালির আস্তর পড়ে ধানি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকায় পাহাড় ধসে অনেক প্রাণ হানির ঘটনাও আছে।
চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর ও লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী পাশাপাশি এলাকা। লামার ফাঁসিয়াখালীর পাহাড়ী খাল ঘেঁষে রয়েছে আরও ৪টি ইটভাটা। এসব ইটভাটাগুলোও অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এই অবৈধ ইটভাটা গুলোতেও পাহাড় কাটা মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। চকরিয়া হারবাং ও পেকুয়া উপজেলা বারবাকিয়া, টৈটংয়ের ইটভাটাগুলোতে পাহাড় কাটা মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটভাটায় ধানি জমির টপসয়েলের পাশাপাশি পাহাড় মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটিগুলো চকরিয়া, পেকুয়া ও লামার পাহাড় কেটেই নেয়া হচ্ছে। পেকুয়ার শিলখালী কাচারী মোরা এলাকায় পাহাড় কেটে ট্রাকে ট্রাকে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। চকরিয়ার বিএমচর ইউনিয়নের হাসি সিকদার পাড়ায় প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটা হচ্ছে। এসব মাটিও ইটভাটাগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে। ফাইতংয়ের স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এখানে বেশীরভাগ ইটভাটার মালিক এক সময় বিএনপি’র রাজনীতি করতো। এখন তাদের বেশীরভাগই ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এদের মধ্যে ফাইতংয়ে এএফসি ইটভাটার মালিক চকরিয়ার বিএনপি নেতা ফরিদুল আলম কন্ট্রাক্টর এখন নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিতেও শুরু করেছন। এতে তারা বেআইনীভাবে পাহাড় কেটে ইটভাটায় নিয়ে গেলেও কেউ কিছু বলতে সাহস করছে না। অভিযোগ রয়েছে ইটভাটার মালিকদের সাথে পুলিশ, বনবিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজস রয়েছে। ফাইতংয়ের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের সাথে সরাসরি কথা হলে তিনি বলেন; ইটভাটার জন্য পাহাড় কেটে ফেলায় ফাইতংয়ের পাহাড়ী এলাকা সমতল ভূমিতে পরিনত হচ্ছে। লামা বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমদ বলেছেন; পাহাড় কাটা, বালি উত্তোলন, পাথর উত্তোলনের মতো বিষয়গুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিরাই দেখে থাকেন। এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খিনওয়ান নু বলেছেন; ফাইতংয়ে পাহাড় কাটার ব্যাপারে এ পর্যন্ত আমাকে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: