ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া বানিয়ারছড়া স্টেশনে সড়ক বিভাগের জায়গা দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  চকরিয়া উপজেলার বানিয়ারছড়া স্টেশনে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া সড়ক বিভাগের কোটি টাকার জমিতে বাণিজ্য স্থাপনা নির্মাণে মেতে উঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। এতদিন ওই জায়গাটি চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হলেও কয়েকবছর আগে স্থায়ী ভবনে চলে যান হাইওয়ে পুলিশ। সেই সুযোগে পাশের রাইস মিল মালিক নুরুল আমিন চৌধুরী কৌশলে ওই জায়গাটি তাঁর দাবি করে দখলে নিয়েছে। ভেঙ্গে ফেলেছে পুলিশের পুরাতন বিল্ডিং ভবনটি।

বর্তমানে দখলে নেয়া ওই জমিতে ইট বালু কংক্রিট মজুদ করার মাধ্যমে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের তোড়জোড় চালাচ্ছেন চক্রটি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ তুলেছেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে বানিয়ারছড়া স্টেশনের পুরাতন সওজ অফিসের জায়গা ছাড়াও উপজেলার পয়েন্টে দিনদিন বেহাত হচ্ছে বেসুমার সরকারি সম্পদ।

বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের চকরিয়া উপ-বিভাগের উপসহকারি প্রকৌশলী আবু আহসান মোহাম্মদ আজিজুল মোস্তাফা। তিনি বলেন, বানিয়ারছড়া স্টেশনে রাইচ মিল মালিক নুরুল আমিন চৌধুরী যে জায়গাটি দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের চেষ্ঠা করছেন, সেটি আমাদের পুরাতন অফিসঘর ও স্টাফ কোর্য়াটার। ২০-২২বছর আগে সেটিতে আমাদের স্টাফরা থাকতো। কর্মকর্তারা সেখানে নিয়মিত অফিস করতো। পরবর্তীতে আমাদের অফিস কার্যক্রম চকরিয়া সদরে স্থাপিত হলে বানিয়ারছড়া স্টেশনের ওই অফিসটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এরপর আমাদের অনুমতি সাপেক্ষে চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে।

তিনি বলেন, প্রায় তিনবছর আগে হাইওয়ে পুলিশ বানিয়ারছড়া স্টেশনের পুর্বপাশে নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ভবনে চলে যান। বছর সময় ভবনটি পরিত্যক্ত থাকলেও সম্প্রতি সময়ে পাশের রাইস মিল মালিক নুরুল আমিন চৌধুরী কৌশলে ওই জায়গাটি দখলে নিয়েছে। ভেঙ্গে ফেলেছে পুলিশের পুরাতন বিল্ডিং ভবনটি। এখন সেখানে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের চেষ্ঠা চালাচ্ছেন।

উপসহকারি প্রকৌশলী আজিজুল মোস্তাফা বলেন, ইতোমধ্যে অফিস থেকে স্টাফ পাঠিয়ে আমাদের ওই জমিতে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ না করতে অভিযুক্ত রাইচ মিল মালিক নুরুল আমিন চৌধুরীর লোকজনকে বারণ করা হয়েছে। বুধবার বিকালে চকরিয়া অফিসে বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে অভিযুক্ত দখলবাজ চক্রকে মৌখিকভাবে বারণ করেছি। তারপরও নির্মাণ কাজ চলতে থাকলে কক্সবাজারস্থ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানানো হবে। তার নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী আইনী প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত রাইচমিল মালিক নুরুল আমিন চৌধুরী মুঠোফোনে দাবি করেন, যে জায়গাটি সড়ক বিভাগের বলা হচ্ছে, সেটি তাঁর নিজস্ব ও ভোগদখলীয় জায়গা। জায়গার বিপরীতে আমার সবধরণের কাগজপত্র রক্ষিত আছে। তিনি ওই জায়গাটি অফিসঘরসহ এতদিন হাইওয়ে পুলিশকে মাসিক ৬ হাজার টাকা হিসেবে ভাড়া দিয়েছিলেন। এমনকি রাইসমিল থেকে বিদুৎ সংযোগও দিয়েছিলেন। কয়েকবছর আগে হাইওয়ে পুলিশ নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ভবনে চলে গেলে অফিসঘরটি খালী হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, অফিসঘরটি আমার। সেই কারণে আমি ভেঙ্গে ফেলেছি। তবে সেখানে নতুন করে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছেনা। তবে জায়গাটি সমতল করার জন্য বালু ফেলে কিছু সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।

বুধবার ১৩ নভেম্বর বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রাইচমিল মালিক নুরুল আমিন চৌধুরী ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেই। কিন্তু তাঁর ম্যানেজার রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একাধিক শ্রমিক বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশে মজুদ রাখা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইট বালু কংক্রিট। স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রহস্যজনক ভুমিকার সুযোগে আমাদের চোঁেখর সামনে সরকারি কোটি টাকা দামের জায়গাটি দখল হয়ে যাচ্ছে। আবার সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমা বলেন, সড়ক বিভাগের জায়গা জবরদখলে জড়িতরা যতবড় প্রভাবশালী হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। একইভাবে বানিয়ারছড়া স্টেশনের আমাদের অফিসঘরের জায়গাটি অবশ্যই দখলমুক্ত করা হবে। বিষয়টির আলোকে চকরিয়া উপজেলা ও থানা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় আইনী প্রদক্ষেপ গ্রহন করবো। ##

পাঠকের মতামত: