নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ মৌলভী মো:ইলিয়াছ চকরিয়ার সাংবাদিক নেতা ছোটন কান্তি নাথকে মুঠোফোনে হুমকি ও ধর্মীয় পরিচয় তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। ওই গালিগালাজের ৫৫ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড শনিবার সকাল থেকে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। তোলপাড় শুরু হয়েছে পুরো উপজেলায়। সাংসদ ইলিয়াছকে নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
ছোটন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের কার্যকরী সভাপতি এবং দৈনিক কালের কন্ঠের চকরিয়া-পেকুয়া প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। হুমকি ও গালিগালাজের ঘটনায় তিনি চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন।
ছোটন কান্তি নাথ বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে সাংসদ ইলিয়াছ তার মুঠোফোন থেকে কল করে বিকৃত, কুরুচিপূর্ণ ও অকথ্য ভাষায় আমার ধর্মীয় পরিচয় তুলে গালিগালাজ করেন। আমাকে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় জড়িয়ে জেল খাটানোরও হুমকি দেন। এ অবস্থায় আমি আশংকা করছি, সাংসদ সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে আমাকে যেকোন সময় অপহরণ করে খুন করে লাশ গুম করতে পারে। জিডিতেও আমি এ আশংকার কথা জানিয়েছি। ’
তিনি বলেন, ‘গত ২৭ অক্টোবর নিজের ফেসবুকে ওয়ালে আমি একটি স্ট্যাটাস দেই। স্ট্যাটাসটি ছিল, ‘জাফর ঠেকাতে মরিয়া বিরোধীরা। গভীর রাতে গোপন বৈঠক বিকাশের বাসায়!’ ওই স্ট্যাটাসটি সাংসদ ইলিয়াছ তার বিরুদ্ধে প্রচার করা হয়েছে মনে করে ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দেন।’ ভাইরাল হওয়া অডিওটি শুনে সাংবাদিক ছোটনের এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
শনিবার দুপুরে সরওয়ার ইমরান নীল নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী গালিগালাজের অডিওটির ইউটিউব লিংক শেয়ার করে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা জানাই। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রায়িক বাংলাদেশে এমন মৌলবাদী একজন রাজনীতিক কিভাবে এমপি হয়েছে সেই প্রশ্নটি এখন জনমনে। একজন এমপির এমন সাম্প্রদায়িক আচরনের তীব্র নিন্দা জানাই।’
এমএম আমিন চৌধুরী নামে একজন আইনজীবিও লিখেছেন প্রায় একই কথা। অডিও লিংক শেয়ার করে তিনি ফেসবুকে লিখেন, ‘তীব্র নিন্দা জানাই..একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার-১ আসনের সাংসদ মৌলভী মোঃ ইলিয়াছ দৈনিক কালের কন্ঠ এর চকরিয়া-পেকুয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক ছোটন কান্তি নাথকে ফোনে হুমকি ও ধর্মীয় পরিচয় তুলে গালি দেন। এই ভিডিওটি এখন ইউটিউবে ভাইরাল। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এমন উগ্র সাম্প্রদায়িক ভাবাপন্ন রাজনীতিক কিভাবে এমপি হয়েছে সেই প্রশ্নটি এখন জনমনে।’
এমএম আমিন চৌধুরীর ওই স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেন দৈনিক যুগান্তরের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি শফি উল্লাহ। তিনি লিখেন, ‘হায়রে এমপি’র পদ। কোন আবর্জনায় গিয়ে পড়ল। প্রতিবাদ নয় ঘৃণা জানাই।’
কালের কন্ঠ শুভ সংঘের চকরিয়া উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আজিজ আজাদের দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, দৈনিক ইনকিলাবের কক্সবাজার ব্যুরো প্রধান শামসুল হক শারেক। তিনি লিখেন, ‘এটাই আমাদের ভাগ্য! সাংবাদিক ভাইয়েরা ঐক্যবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদে এগিয়ে আসুন। আমি মনে করি এই অসভ্য ব্যবহারের জন্য এমপি ইলিয়াছের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।’
ইউটিউব ও সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া অডিও এবং গালিগালাজের বিষয়ে সাংসদ ইলিয়াছের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দুপুরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
একটি সম্প্রদায়কে ধরে গালিগালাজে বেশ ক্ষুদ্ধ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চকরিয়ার সভাপতি রতন বরণ দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মুকুল কান্তি দাশ। তারা বলেন, ‘প্রথমে বলি, তিনি আমাদের একজন এমপি। তাও আবার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের একজন এমপি হলেও আমরা মনে করি ইলিয়াছ লালন করেন সাম্প্রদায়িক চেতনাকে। না হলে তিনি এমপি পদে থেকে কিভাবে একজন সাংবাদিককে হুমকি দিতে গিয়ে পুরো হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও বিকৃত ভাষায় গালিগালাজ করলেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে অচিরেই কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামবো।’
চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ ও সাধারণ সম্পাদক বাবলা দেবনাথ বলেন, ‘আমরা এমপি ইলিয়াছের অতীতের সব রেকর্ড জানি। এর পরও তিনি ঘটনাচক্রে এমপি হয়ে গেছেন ভাল। কিন্তু যখন ব্যক্তিগতভাবে কাউকে হুমকি দিতে গিয়ে পুরো হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পরিচয় তুলে গালিগালাজ করবেন তখন তো আর বসে থাকতে পারি না।’
চকরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মিজবাউল হক বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক ও উষ্কানিমূলক কটাক্ষ করে প্রেসক্লাবের কার্যকরী সভাপতি ছোটন কান্তি নাথকে গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়াসহ পুরো হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে স্থানীয় ভাষায় কুরুচিপূর্ণ কটুক্তির তীব্র নিন্দা জানাই। এজন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিক ছোটনের পক্ষ থেকে এ ধরণের একটি অভিযোগ দিলে তা সাধারণ ডায়েরী হিসেবে রুজু করা হয়েছে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক। বিষয়টির তদন্ত চলছে।’
পাঠকের মতামত: