নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে সংখ্যালঘু ভোটাররা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের কেন্দ্রে যাবেন তারা। সংখ্যালঘুরা যে দিকে বেশি ঝুঁকবেন সেদিকেই বিজয় নিশ্চিত হবে। প্রার্থী বিজয়ে ফ্যাক্টর হচ্ছে সংখ্যালঘু ভোটারগণ এমন দাবী সচেতনমহলের।
জানা যায়, সংখ্যালঘুদের ভোট এককভাবে কোনো প্রার্থী পাবেন না, ভোটগুলো কয়েক ভাগেই পড়বে। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সাংসদ জাফর আলম যেমন সংখ্যালঘুদের ভোটের ভাগ কাউকে দিতে চান না, ঠিক তেমনি কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমও সংখ্যালঘুদের ভোটের ভাগ দিতে চান না।
এদিকে কক্সবাজার-১ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ৭জন প্রার্থী। এরমধ্যে ভোটের লড়াইয়ে আলোচনায় এসেছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সাংসদ জাফর আলম।
শেষ মুহুর্তে এসে এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সভা, সমাবেশ ও উঠোন বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন। একইভাবে তাদের সমর্থকরাও গণসংযোগ ও নির্বাচনী লিফলেট বিতরণ করছেন। দফায় দফায় উঠোন বৈঠক করছেন। শতভাগ ভোট নিজের পক্ষে টানতে কর্মী বাহিনী নিয়ে মাঠে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন তারা।
তবে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফ্যাক্টর হবে সংখ্যালঘু ভোটার। তারা যাকে ভোট দেবে তারই বিজয় নিশ্চিত হবে। এখানকার সংখ্যালঘুরা বড় একটি শক্তি বলে দাবি করেছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। অন্যদিকে, সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে শুরু থেকেই কাজ করছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম।
এ গোষ্ঠীর ভোটারদের মন জয় করতে চাইছেন তিনি। তাঁর কর্মী বাহিনীও সংখ্যালঘুদের মন জয় করতে নানা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। হাতঘড়ির পক্ষে একাধিক বৈঠক করেছেন। হাতঘড়ির পক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠ কাজ করছেন চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। সংগঠনটি হাতঘড়িকে বিজয় করতে ইউনিয়ন ভিত্তিক প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল কর ও সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ হাতঘড়ির পক্ষে কাজ করতে চকরিয়া উপজেলা কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেক সভায় যোগ দিচ্ছেন সংসদ সদস্য প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম। গত ২ ডিসেম্বর ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি, সম্পাদক, গুরুত্বপূর্ন নেতাদের নিয়ে সভা করেছেন পূজা কমিটি। তাদেরকে হাতঘড়ির পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে কক্সবাজার-১ আসনটি গঠিত। এখানে প্রত্যেক ইউনিয়নে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড, ৩নং ওয়ার্ড, ৪নং ওয়ার্ড ও ৮নং ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে।
এছাড়াও কাকারা, হারবাং, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, কৈয়ারবিল ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে সংখ্যালগু ভোটার রয়েছে। এসব ইউনিয়নে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও রাখাইন সম্প্রদায়ের মোট ভোটারের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।
বিগত সব নির্বাচনেই সংখ্যালঘুরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ভোট দেবেন। নির্বাচনের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে বলে জানান পূজা কমিটির নেতারা।
অপরদিকে হারবাং ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। এসব জনগোষ্টির কাছে এখনো কোন প্রার্থী যায়নি বলে দাবী করেন স্থানীয়রা। ৭জন প্রার্থী মাঠে থাকলেও এখনো কোন প্রার্থী রাখাইন সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ করেনি। এ নির্বাচনে কারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিষয়ে কেউই অবগত নন রাখাইনরা।
স্থানীয়রা বলছেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনে সংখ্যালঘুদের ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর। এখানকার সংখ্যালঘুরা বিএনপির নির্যাতন আর অত্যাচারের কথা ভুলে যাননি। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিকে তাঁরা কখনও সমর্থন করেন না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা, শ্মশান নির্মাণ ও সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে দেওয়ার আশ্বাসসহ নানা কৌশলে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। স্থানীয় কয়েকটি হিন্দু পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এটা জানা যায়।
চকরিয়া উপজেলা পূজা উযাপদ পরিষদ সভাপতি তপন কান্তি দাশ বলেন, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় হিন্দু বৌদ্ধ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ হাজার ভোট রয়েছে। এবারের ভোটারেরা পরিবর্তন চান। বিগত সময়ে জমি দখল, মিথ্যা মামলা ও হয়রানী থেকে বাঁচতে নতুন কাউকে দেবেন সংখ্যালঘুরা। তবে কেউই এককভাবে সংখ্যালঘুদের ভোট পাবেন না।
পাঠকের মতামত: