নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী বর্তমান সাংসদ জাফর আলমের বিরুদ্ধে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেয়া হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে প্রকাশ, হলফনামায় সম্পদের অন্যান্য বিবরণ উল্লেখ থাকলেও প্রায় ১১০ কোটি টাকার সম্পদ গোপন করেছেন বর্তমান সাংসদ। গত ৭ ডিসেম্বর তার প্রার্থীতা বাতিলের জন্য পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা রমিজ আহমদের পুত্র মো. আজমগীর বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্বাচন কমিশনে।
মো. আজমগীর বলেন, জাফর আলমের হলফনামা দেখা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ জাফর আলম তার নিবার্চনী হলফনামায় বড় ধরণের তথ্যগোপন করেছেন।
হলফনামায় আয়-ব্যয় ও বিভিন্ন সম্পদের বিবরণ উল্লেখ করলেও ১১০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন তিনি। গত পাঁচবছরে সংসদ সদস্য জাফর আলমের সম্পদ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ গুণ। বেড়েছে তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের পরিমানও। সবচেয়ে সম্পদ বেড়েছে স্ত্রী শাহেদা বেগমের।
গত পাঁচ বছরে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম ও তার পরিবারের নামে একাধিক জমির দলিল থাকা সত্বেও ওইসব দলিলের বিপরীতে সম্পদের পরিমান উল্লেখ করেননি।
পেকুয়া মৌজায় তার নামে ৬টি জমির দলিল সম্পাদন হয়েছে। এরমধ্যে ২০-১০-২০ সালে দলিল নং ১৯১৮, ১০-১১-২০২০ সালে দলিল নং ১৯৮৮, ২৯-১০-২০ সালে দলিল নং ১৯২১, ২৩-১১-২০ সালে দলিল নং ১৯৭৯, ২৩-১২-২০ সালে দলিল নং ১৯১৯, ২৮-১২-২০ সালে দলিল নং ১১৮০। এসব সৃজিত দলিলের বিপরীতে পেকুয়া মৌজায় ৮৫.৬২ শতক জমি রয়েছে। এই জমির উপর পেকুয়া কবির আহমদ বাজারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। যার নাম পেকুয়া নিউ মার্কেট। ওই জায়গার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা। মগনামা মৌজায় রয়েছে ১৯৫.১২ শতক জমি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি। নির্বাচনী হলফনামায় প্রায় ১১০ কোটি টাকার সম্পদ উল্লেখ করেনি জাফর আলম।
হলফনামায় তথ্যগোপন করেছেন। তার মনোনয়ন বাতিলের জন্য গত ৩ ডিসেম্বর জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন মো. আজমগীর। ওইসময় জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা আজমগীরের আবেদন আমলে নেননি। পরে ৭ ডিসেম্বর আজমগীর বাদী হয়ে নির্বাচন কমিশনে একই অভিযোগ নিয়ে আপীল করেন। এরপ্রেক্ষিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জাফর আলম। গত পাঁচ বছরে এমপি জাফর আলমের সম্পদ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ গুণ। ইতোমধ্যে নানা অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। যা গত পাচ বছরের তুলনায় দশ গুণ বেশি।
উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ২৪ আগস্ট জাফর আলম, তার স্ত্রী শাহেদা বেগম, ছেলে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন ও মেয়ে তানিয়া আফরিনকে তলব করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কক্সবাজার জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম। গত ৪ সেপ্টেম্বর জাফর আলমসহ অভিযুক্ত চারজন দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে সম্পদের বিবরণ তুলে ধরেন। এরপর দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে শুরু করেন।
অনুসন্ধানে এমপি জাফর আলম ও তার স্ত্রীসহ সন্তানদের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক জমির দলিলের সত্যতা পায় দুদক।
পাঠকের মতামত: