ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়ায় চিংড়িঘেরে মড়ক: মারা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাছ

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে :::
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, সাহারবিল, বদরখালী, পশ্চিম বড়ভেওলা, চিরিঙ্গা, কোনাখালী, ডেমুশিয়া ও পেকুয়া উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী, পেকুয়া সদরসহ এ দু’উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সরকারী ও বেসরকারী ভাবে প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে প্রায় অর্ধলাখ চিংড়িচাষী শতকোটি টাকার পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রতিবছর চিংড়ি চাষ করে থাকে। ওই চিংড়িঘেরে ভাইরাস জনিত কারণে প্রতি ‘জো’তে (মাছ ধরার সময়) কোটি কোটি টাকার চিংড়ি মাছ মারা যচ্ছে। কিন্তু এসব দেখবাল করার দায়িত্বে নিয়েজিত মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক চাষীদের কোন সু-পরামর্শ ও চিকিৎসার না করায় চাষীরা দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। চিংড়ি জোনে ভাইরাসের আক্রমণে এক ‘জো’তেই (মাছ ধরার সময়) পথে বসেছেন চাষিরা। পর পর দুইবার বন্যা পরবর্তী চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একরের চিংড়ি জোনে এই ভাইরাস আক্রমণ করায় হাজার- হাজার চাষিসহ চিংড়ি চাষের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত প্রায় ৫০ হাজার চাষী ও শ্রমিক কর্মচারীদের মাথঅয় হাত উঠেছে।
হঠাৎ করে কেন এই মড়ক এমন তথ্যানুসন্ধান করতে গেলে চিংড়ি বিশেষজ্ঞ ও চাষিরা জানিয়েছেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে চকরিয়া ও পেকুয়ায় লাগাতার ভারী বর্ষণ ও পর পর দুই দফা ভয়াবহ বন্যা হয়েছে এর মধ্যে। এর প্রভাব পড়েছে বিশাল চিংড়ি জোনেও। এ কারণে ঘেরের লোনা পানিতে লবণাক্ততা একেবারে কমে গেছে। আবার কয়েকদিন একনাগাড়ে প্রখর রোদ পড়ায় তাও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে চিংড়ি জোনে। এসব কারণে চিংড়ি জোনে এই বিপর্যয় নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ‘পর পর দুইবার বন্যায় ৬০ হাজার একরের এই চিংড়ি জোন ব্যাপকভাবে তলিয়ে যায় এবং একনাগাড়ে কয়েকদিন ধরে পাহাড়ি ঢলের পানি অবস্থান করে ঘেরগুলোতে। এ কারণে কয়েক ধরনের ভাইরাস ছড়াতে পারে চিংড়ি ঘেরে। তম্মধ্যে চায়না ভাইরাস থাকতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চিংড়ি মরে গিয়ে গায়ে দাগ পড়ে যাবে।’ মৎস্য বিশেষজ্ঞ সাইফুর রহমান আরো বলেন, ‘বন্যার সময় চিংড়ি জোনে ঘেরগুলোতে লবণাক্ততার পরিমাণ একেবারে শুন্যের কোটায় নেমে আসে। তার ওপর ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় তা প্রকট রূপ নেয়। চিংড়ি ঘেরে লবণাক্ততার পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। তা না হলে চিংড়ি বেঁচে থাকবে না, অবশ্যই মড়ক দেখা দেবে।’
চকরিয়া চিংড়ি খামার মালিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম উল্লাাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, লাগাতার ভারী বর্ষণ ও পর পর দুইবার ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে চকরিয়ার চিংড়ি জোন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বর্তমানে ব্যাপকভাবে মড়ক দেখা দিয়েছে চিংড়িতে। এতে বন্যা পরবর্তী বড় ‘জোঁ’তে ৬০ হাজার একরের এই চিংড়ি জোনের ২০০০ খামার মালিকের কয়েকশ কোটি টাকার উৎপাদিত চিংড়ি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরে গিয়ে লালচে রং ধারণ করেছে। উৎপাদিত চিংড়ি ঘেরের কাছেই মাটিতে পুঁতে ফেলতে হচ্ছে। প্রতি ‘জোঁ’তে ২ দশমিক ৪৭ একর জমিতে চিংড়ি উৎপাদন হয় ২৫০ কেজি।
উপজেলার রামপুর মৌজার চিংড়িজোনের চিলখালী ঘোনার ৩১০ একরের প্রকল্পটির মালিক চিংড়ি চাষি পৌরসভার কাহারিয়াঘোনা গ্রামের বাসিন্দা সেকান্দর বাদশা নাগু। বৃহৎ এই প্রকল্পের পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, গত একমাসে তাদের প্রকল্পের অন্তত ৩০ লাখ টাকার উৎপাদিত চিংড়ি ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মারা পড়েছে। একই অবস্থা পুরো চিংড়িজোনের। এতে চিংড়ি চাষিরা দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের বিষয়ে জানতে চাইলে এক মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘চিংড়ি ঘেরের এই ভাইরাস রোধ করার বিষয়ে তেমন কোন বৈজ্ঞানিক উপায় নেই। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। তাই আবহাওয়া ঠিক থাকলে ঘেরের পানির লবণাক্ততার পরিমাণও মাত্রার মধ্যে থাকবে।’
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আবদুল আলীম গতরাতে বলেন, ‘চকরিয়ায় চিংড়িঘেরে ব্যাপক আকারে মড়ক দেখা দিয়েছে কী–না তা আমার জানা নেই। তবে নানা কারণে ঘেরগুলোতে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে। তন্মধ্যে অতি বর্ষণ, আবার অতিরিক্ত মাত্রায় গরম পড়লে এই সমস্যা দেয়।’

পাঠকের মতামত: