নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়ায মালুমঘাটে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৬ ভাই নিহতের ঘটনায় একটানা ১৪ দিন অচেতন অবস্থায় থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান রক্তিম শীল। এদিন রাতে ডুলাহাজারা শ্মশানে পাঁচ ভাইয়ের পাশেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয় তার।
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী রক্তিম মারা যাওয়ার দশদিন পর গতকাল শুক্রবার ছিল তার পারলৌকিক ক্রিয়া (শ্রাদ্ধ)। রক্তিমের সাড়ে তিন বছরের একমাত্র পুত্রসন্তান ঋদ্ধি শীলেরই বাবার সেই শ্রাদ্ধের আসনে বসার কথা ছিল। কিন্তু এখনো কিছুই বুঝে উঠার বয়স তার হয়নি। তাই পুত্রের পরিবর্তে স্বামী রক্তিমের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হয় স্ত্রী সুমনাকে।
চকরিয়ার মালুমঘাটের হাসিনাপাড়ার প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিধবার সাদা পোশাকে স্বামী রক্তিমের শ্রাদ্ধের আসনে বসেন সুমনা। এ সময় পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্র পাঠ করার সময় তার দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জল। সেই দৃশ্য দেখে উপস্থিত শোকার্ত পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ সময় সুমনা শর্মা দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, আমাদের সন্তান ঋদ্ধি এখনো ছোট। সে এখনো বুঝতেই পারছে না দুনিয়াতে তার বাবা বেঁচে নেই। মারা যাওয়ার দশদিন পর ঋদ্ধির ক্ষৌরকর্মাদি সম্পন্ন করা হলেও আজ (গতকাল) বাবার শ্রাদ্ধের আসনে সে বসেনি। অনেক চেষ্টা করেছি তাকে শ্রাদ্ধের আসনে বসাতে। কিন্তু সময়বয়সীদের সঙ্গে সে খেলার ছলে থাকায় শেষ পর্যন্ত পুরোহিতের নির্দেশে আমিই বসেছি শ্রাদ্ধের আসনে।
এদিকে একে একে ছয় সন্তান হারিয়ে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি বৃদ্ধা মা মৃণালিনী শীল মানু। তিনি উঠানের এক প্রান্তে বসে সন্তান রক্তিমের পারলৌকিক শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান অবলোকন করেন। এ সময় নিরবে বসে চোখের জল ফেলছিলেন তিনি।
পাঠকের মতামত: