ঢাকা,বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চিকিৎসার নামে রোগীীদের সাথে প্রতারণা

চকরিয়া জমজম হাসপাতাল থেকে ভূয়া ডাক্তার আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: হুমায়ুন কবির নামের একজন ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।কক্সবাজারের চকরিয়া জমজম হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াকালীন অবস্থায় জমজম হাসপাতাল থেকে হুমায়ুন কবির (৩৫) নামে এক ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ওই ভুয়া চিকিৎসককে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আজ বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত চকরিয়া জমজম হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ভুয়া চিকিৎসক মুন্সিগঞ্জ জেলার টরকী ইসলামপুর এলাকার মোহাম্মদ দিদারুল আলমের পুত্র।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক রাহাত উজ্জামান। তিনি চকরিয়া নিউজকে বলেন, অভিজ্ঞ চিকিৎসক সেজে অপচিকিৎসা দিচ্ছেন এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চকরিয়া জমজম হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে হুমায়ুন কবিরকে আটক করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ডিগ্রি না থাকলেও সার্জন হিসেবে (লিভার, পরিপাকতন্ত্র, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন) বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে রোগী দেখা ও প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন ব্যবহার করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪৪ ধারায় তাকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার জরিমানা করা হয়েছে।অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের জন্য বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।

অভিযানের সময় ওই চিকিৎসার কোন ধরণের বৈধ সনদ দেখাতে পারেননি। এমনকি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষারও সনদ দেখাতে ব্যর্থ হন। এসময় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও তিনমাসের জেল দেন। অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের জেল দেন ওই চিকিৎসককে। চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আটককৃত ডাক্তারের বিরুদ্ধে ২০০৯ এর ৫২ ও ৫৩ ধারা অনুযায়ী একটি মামলা করেন যার মামলা নং- ৫৩/২০২২।
দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে নানা রোগের চিকিৎসা দিতেন ওই চিকিৎসক। বিশেষ করে লিভার, পরিপাকতন্ত্র, ডায়াবেটিসের মতো রোগের। নিজেকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেও দাবী করতেন তিনি। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার ইসলামপুর টরকীচর এলাকার মোহাম্মদ দিদারুল আলমের পুত্র বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক রাহাত উজ্জামান। তিনি চকরিয়া নিউজকে বলেন, অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির মুলত একজন ভুয়া চিকিৎসক। তার সকল ডিগ্রি ভুয়া। তিনি বিষয়টি গোপন করে একই নামের অপর অন্য চিকিৎসকের কাগজপত্র জালিয়াতি করে দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে চকরিয়া জমজম হাসপাতালে কর্মরত থেকে চিকিৎসা নামে প্রতারণা করে আসছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সকালে জমজম হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। পরে তিনি (ভুয়া চিকিৎসক হুমায়ুন কবির) ভ্রাম্যমান আদালতের কাছে বিষয়টি স্বীকার করলে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও ১৫ দিন কারাভোগ করতে হবে। জমজম হাসপাতালের পরিচালক গোলাম কবির থেকে ভুয়া চিকিৎষক আটকের বিষয়ে জানতে মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ না করার তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, আটককৃত ওই ভুয়া চিকিৎসককে ভ্রাম্যমান আদালতের আদেশে জেলহাজতে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা জানান, চকরিয়া উপজেলার জামায়াত-শিবিরের সাবেক নেতারা প্রতিষ্ঠা করেন জমজম হাসপাতালটি। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেবার নামে গলাকাটা বাণিজ্য করে আসছিল। রোগীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার অভিযোগও আছে। এতোদিন ভূয়া চিকিৎসক দিয়ে পরিচালনা করে আসছে জামাত-শিবির নিয়ন্ত্রিণ এ প্রতিষ্ঠানটি। শেষ পর্যন্ত গোপন সংবাদ পেয়ে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমান আদালত।

ওই ভুয়া চিকিৎসক মো: হুমায়ুন কবির দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। তার ভিজিটিং কার্ডে লেখা উচ্চ ডিগ্রি ব্যবহার করছেন, অভিযান চলাকালে তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি বলেও জানান তিনি। চকরিয়ায় জনস্বার্থে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পাঠকের মতামত: