এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
মাহামুহুরী নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে চকরিয়া গ্রামার স্কুলের ৫ মেধাবি শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুর ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ৪দিনের শোক কর্মসূচির ২য়দিন মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় স্কুল মিলনায়তনে পবিত্র খতমে কুরআন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। অপরদিকে পাঁচ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পাশাপাশি কীভাবে একসঙ্গে পাঁচজন মেধাবী শিক্ষার্থী অকালে মারা গেছেন এই ঘটনা নিয়ে কৌতুহলী মানুষের মাঝে নানা ধরণের জল্পনা কল্পনা চলছে।
অনেকে ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে ধরে নিলেও পরিবেশ সচেতন মহল অভিযোগ তুলেছেন মেধাবী এসব শিক্ষার্থীদের মুত্যুর ঘটনার জন্য অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িতরা দায়ী।
ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারনে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তলদেশে ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। এসব গর্তে বৃষ্টির পানির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পলি মাটি পড়ে ভরাট হলেও গর্তগুলোর মুখ নরম থাকায় ভারি কিছু পড়লেই ওই গর্তে (টলটলে বালু) ডুবে যায়। এসব গর্তই মুলত চোরাবালি হিসেবে পরিণত হয়। আর এসব চোরাবালিতে আটকে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে মেধাবী পাঁচ শিক্ষার্থীকে। অবশ্য সম্প্রতি সময়ে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রীজ পয়েন্টের বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন।
এদিকে স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহল, মাতামুহুরী নদীতে অদুর ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেইজন্য পাঁচ শিক্ষার্থীর মুত্যুর ঘটনার প্রকৃত রহস্য উৎঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে। প্রয়োজনে তদন্ত কার্যক্রমে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিষ্ট্রেট ছাড়াও বুয়েট থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিশেষঞ্জ টিমকে রাখার দাবিও জানানো হয়েছে।
চকরিয়া গ্রামার স্কুলের উপাধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া এডুকেয়ার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, অধ্যাপক রিদুয়ানুল হক, স্কুলের শিক্ষক মো: শহিদুল ইসলাম, নুরুল আবছারসহ শিক্ষক-শিক্ষিকাগন ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। দোয়া মাহফিলে ছাত্রদের নিয়ে স্কুলের শিক্ষক মাওলানা আরশাদ হোসাইন এবং ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষক মাওলানা ওমর আজম পৃথক পৃথক মুনাজাত পরিচালনা করেন। মুনাজাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। প্রিয় সহপাঠী ও শিক্ষার্থীদের হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ছাত্ররা। এসময় শিক্ষক-শিক্ষিকা, সর্বস্তরের শিক্ষার্থীসহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আরো দুইদিন শোক কর্মসূচির আওতায় আজ বুধবার ও কাল বৃহস্পতিবার নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় খতমে কুরআন এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হবে। অন্যদিকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রণব কুমার দে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। একইদিন উপজেলা ও পৌরশহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চকরিয়া গ্রামার স্কুলের ৫ মেধাবি শিক্ষার্থীর স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। অপরদিকে চকরিয়া গ্রামার স্কুলসহ উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দলে দলে গিয়ে ৫ মেধাবী শিক্ষার্থীদের কবরে গিয়ে জিয়ারত করেছেন।
শনিবার ১৪জুলাই বিকাল ৩টার দিকে মাতামুহুরীর নদীর চোরাবালিতে আটকে চকরিয়া গ্রামার স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাঈদ জাওয়াদ অরভি (১৫), দুই ভাই দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আমিরুল হোসেন এমশাদ (১৮) ও অস্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া আফতাব হোসেন মেহরাব (১৪) , দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া তূর্ণ ভট্টাচার্য্য ও একই শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারহান বিন শওকত (১৫) পাঁচ ছাত্র নিখোঁজ হয়। ওইদিন উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরীদল ও স্থানীয় লোকজন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মাতামুহুরী নদীর তলদেশ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। ##
পাঠকের মতামত: