ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সড়ক উন্নয়নের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :: পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পিআরডিপি-৩ স্কীমের অধীনে চকরিয়া উপজেলার দু’টি ইউনিয়নের সড়ক মেরামত ও অবকাঠামো উন্নয়নের বরাদ্দের টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। উপজেলার বদরখালী ও বরইতলী ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ দুটি ইউনিয়নে ৫টি উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হলেও আরও ৪টি প্রকল্পের টাকা কাজ না করে আত্মসাত করেছেন তারা।

সূত্র জানায়, ২০২১-২২ বছরে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবির) আওতায় পিআরডিপি-৩ স্কীম অধীনে গ্রামীণ জীবনমান উন্নয়নে গ্রামীণ ক্ষুদ্র অবকাঠামো নির্মাণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ৯টি প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।

প্রত্যেক প্রকল্পের জন্য ৮০ হাজার টাকা, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকা ১৫ হাজার এবং পরিষদ থেকে ৫ হাজার টাকা সহ মোট এক লক্ষ টাকা দিয়ে কাজ সম্পাদন করার নিয়ম রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্বান্ত নেওয়া হয়। এরমধ্যে বদরখালী ৫টি ও বরইতলী ইউনিয়নে ৪টি।

এ দু’ইউনিয়নে আভ্যন্তরীণ সড়ক ও রাস্তা মেরামতে ৯টি প্রকল্প বরাদ্দ দিলেও ৫টি প্রকল্পের কাজ সম্পাদন করা হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা চকরিয়া উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন শরীফ ও সহকারি পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমানের যোগসাজসে চরম অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। ওই দুই কর্মকর্তা সোনালী ব্যাংক চকরিয়া শাখা থেকে চেকের মাধ্যমে এসব টাকা গুলো উত্তোলন করেছেন।

তারা ইউনিয়ন গুলোতে কোন ধরণের কাজ না করে ৪টি প্রকল্পের প্রায় চার লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কক্সবাজার বিআরডিবির সাবেক উপ-পরিচালক মোশারফের হোসেনের আশকারায় তারা টাকা আত্মসাতের সুযোগ পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে কাজ না করে বরাদ্দের টাকা লুটপাট করার কারণে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩০ নভেম্বর তদন্ত কমিটি বদরখালী ও বরইতলী ইউনিয়নের প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে তড়িগড়ি করে বদরখালী ও বরইতলী ইউনিয়নে নতুন করে রাস্তার কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন গুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্ষা এবং মালামালের দাম বৃদ্ধির কারণে বন্ধ করলেও পরবর্তীতে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা অত্র অফিসে যোগদানের পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সমবায়ীদের প্রশিক্ষনের নামে ভুয়া ভাউচার ও হলরুম বাবদ ভাড়ার টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন শরীফ রামু উপজেলাতে পোস্টিং হলেও মূলত চকরিয়া উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এ সুযোগে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন ওই কর্মকর্তা।

চকরিয়া উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন শরীফ বলেন, বদরখালী ও বরইতলী ইউনিয়নের সড়ক মেরামত ও গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য পিআরডিপি-৩ থেকে ৯টি স্কীম বরাদ্দ পেয়েছি। ৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টি প্রকল্প জুনের আগে সম্পন্ন করা হয়েছে। পরবর্তীতে বর্ষার কারণে ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলেও তবে এখন কাজ শুরু করা হয়েছে। কোন ধরণের টাকা আত্মসাত করা হয়নি। বাকী ৪টি প্রকল্পের নতুনভাবে শুরু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে করতে হয়। অনেক সময় প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পরিষদকে না জানিয়ে বাস্তবায়ন করে। ফলে অনিয়ম ও দূর্নীতি আশ্রয় নেন তারা। এধরণের প্রকল্পের কথা তাকে জানানো হয়নি বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: