ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

নিজ অফিসকক্ষে চার ঘন্টা অবরুদ্ধ টিএইচও 

চকরিয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের এমএইচবির ৩১৫ মাঠকর্মীর  বেতনের ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাত চেষ্টায় তুঘলকিকাণ্ড

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন ১৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমর্রত  মাল্টিপারপাস হেল্থ ভলান্টিয়ার’ (এমএইচবি)এর ৩১৫ জন মাঠকর্মীর বেতনের ৩৪ লাখ টাকা লুটপাটের মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে । প্রকল্পের অধীনে দুইমাস আগে ৩১৫ মার্ঠকমীর নামে বরাদ্দকৃত বেতনের সমৃদয় টাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাবরক্ষক সৈয়দ হোছাইন ছাড় করে আনলেও এতদিন মাঠকর্মীদের মাঝে বিতরণ করেননি। উল্টো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাঃ শোভন দত্তের ইশারায় সিএইচসিপি পদবিধারী চারজনের একটি সিন্ডিকেট চক্র সুযোগ বুঝে প্রতিজন এমএইচবি কর্মীকে বেতনের ১০ হাজার ৮০০ শত টাকার বদলে ৮ হাজার টাকা কিংবা আরও কম টাকা বিতরণ করে বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা আত্মসাতে মেতে উঠেছে।
এ অবস্থায় আত্মসাত চেষ্টার বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল বুধবার (১৪ আগস্ট) সকাল এগারোটার দিকে বেতন বঞ্চিত এমএইচবির নারী পুরুষ মাঠকর্মীরা জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে দেড়শ থেকে দুই শতাধিক মাঠকর্মী দুপুর বারোটার দিকে একযোগে চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালের  অফিসকক্ষে ঢুকে বেতনের টাকা পরিশোধের দাবিতে টিএইচও ডাঃ শোভন দত্তকে অবরুদ্ধ করে। ওইসময় বিক্ষুব্ধ মাঠকর্মীরা হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ শোভন দত্ত ও হিসাবরক্ষক সৈয়দ হোছাইনের অনিয়ম অসঙ্গতি নিয়ে সেখানে চরম হট্টগোল করে।
এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারী এসে বেতন বঞ্চিত এমএইচবির মাঠকর্মীদের নিবারণ করতে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন।
এমন পরিস্থিতিতে নিজ অফিসকক্ষে টানা চারঘন্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর বিক্ষুব্ধ এমএইচবির মাঠকর্মী সবাইকে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বেতনের টাকা পরিশোধ করার আশ্বাস দেন টিএইচও ডাঃ শোভন দত্ত। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এমএইচবির বিক্ষুব্ধ মাঠকর্মীরা বাড়ি ফিরে যান৷
অবরুদ্ধ অবস্থায় বিষয়টি প্রসঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাঃ শোভন দত্ত। তিনি বলেন, এমএইচবির মাঠকর্মীদের বেতনের টাকা আত্মসাত করার অভিযোগটি সত্য নয়। তাদের বেতনের টাকাগুলো বিতরণের জন্য আমরা চারজন সুপারভাইজারকে দায়িত্ব দিয়েছি। তাঁরা ইতোমধ্যে অনেকের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। পর্যাযক্নমে সবার টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সুপারভাইজারদের একজন মোহাম্মদ মিরাজ এখনো অনেকের টাকা পরিশোধ করেনি। এইজন্য তিনি দায় স্বীকার করেছেন। এসব টাকা কৌশলে আটকে রেখেছিল। টাকা পরিশোধ করার জন্য তিনি নগদে ব্যাংক চেক দিয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া স্বাস্থ্য বিভাগের সিএইচসিপি মোহাম্মদ মিরাজ বলেন, আমরা চারজনের হাতে যত টাকা দেওয়া হয়েছে, সব টাকা ইতোমধ্যে এমএইচবির মাঠকর্মীদের মাঝে বিতরণ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার যাঁরা হাসপাতালে এসে বেতনের জন্য জটলা করেছে, তাদের বেতনের টাকা আত্মসাতের জন্য কৌশলে আটকে রেখেছে হিসাবরক্ষক সৈয়দ হোছাইন।
তারপরও উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আমি নিজের সাড়ে ৯ লাখ টাকা আজ (বৃহস্পতিবার) এমএইচবির বঞ্চিত কর্মীদের  মাঝে বিতরণ করে দেব বলে টিএইচও ডাঃ শোভন দত্ত এবং বিক্ষুব্ধ মাঠকর্মী সবাইকে জানিয়েছি।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের সাপোর্ট হিসেবে গত ২০১৯ সালে ‘মাল্টিপারপাস হেল্থ ভলান্টিয়ার’ (এমএইচবি) নামে একটি প্রকল্প চালু করেন আওয়ামী লীগ সরকার। এই কার্যক্রমের আওতায় চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে জনগণের মাঝে চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতা করতেন  মাল্টিপারপাস হেল্থ ভলান্টিয়ার’ (এমএইচবি) এর মোট ৩১৫ জন নারী-পুরুষ মাঠকর্মী। তাদের নানাবিধ সহায়তায়  প্রতিদিন গ্রামের হাজারো মানুষ স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে থাকেন এই ক্লিনিকের মাধ্যমে।

পাঠকের মতামত: