ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

বনবিভাগের অনুমোদন আছে ৯টি, তৈরি হচ্ছে অন্তত ৩০টি

চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনের মাদারট্রি দিয়ে ফিশিংবোট তৈরির হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চোরাই মাদারট্রি গর্জন নিধনের মাধ্যমে কাঠ সংগ্রহ করে অবৈধ ফিশিং বোট তৈরির হিড়িক পড়েছে। বনবিভাগের কোন অনুমতি ছাড়াই কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন জায়গায় বীরদর্পে এসব অবৈধ ফিশিং বোট তৈরি করে চলেছেন। আর সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের লোকজন এসব দেখেও রহস্যজনকভাবে নিরব দর্শকের ভুমিকায় রয়েছেন।জানা গেছে, প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে বনাঞ্চলের মাদার ট্রি নিধন করে ফিশিং বোট তৈরির কাজ শুরু করেন কতিপয় প্রভাবশালী বোট ব্যবসায়ীরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী, কাটাখালী, সাইরাখালী, চুনতিরটেকসহ বিভিন্নস্থানে, সাহারবিলের চোয়ারফাড়ি, বাটাখালী সেতুর দক্ষিনে, বেতুয়া বাজার, কৈয়াবিল ইউনিয়নের ডিগকূল এবং বিএমচর ইউনিয়ন ও উপকূলীয় বদরখালী সেতুর আশপাশ এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী এলাকায় ফিশিং বোট তৈরির হিড়িক পড়েছে।বর্তমানে সাহারবিলের চোয়ারফাড়ি এলাকায় একইস্থানে তৈরি হচ্ছে ১২টি ফিশিং বোট। তদমধ্যে মাতামুহুরী বাঁশ সমিতির নেতা মোহাম্মদ সেলিমের দুইটি, নুরুল হক মেম্বারের তিনটি, তরছঘাট এলাকার আনোয়ার হোসেনের দুইটি, সোসাইটি মাছের আড়তদার আক্কাস সওদাগরের দুইটি, কৈয়ারবিলের বাচ্ছু মিয়ার একটি, কাসেম মাঝির একটি, সাবেক কমিশনার সাইফুল্লাহ মানিকের একটি। পাশে রামপুর এলাকায় তৈরী হচ্ছে জাফর সওদাগরের দুইটি ও আবদুর রহিম মেম্বারের একটি ফিশিং বোট।একইভাবে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ডিগকুল খোঁজাখালী এলাকায় তৈরী হচ্ছে ৬টি ফিশিং বোট। তদমধ্যে আছে এনামুল হকের দুইটি, জসিম উদ্দিন প্রকাশ বুড়া জসিমের একটি, বেলাল উদ্দিনের একটি, ফইন্যা জলদাশের একটি, ছিকলঘাটার মিন্টুর একটি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিন্টুর ফিশিং বোটের সিংহভাগ গর্জনগাছ নলবিলা বনবিটের পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিনিময়ে নলবিলা বনবিটের লোকজন আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন।উল্লেখিত দুইটি স্থানের মতো চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদ বদরখালী সেতুর পাশেও অবৈধ ফিশিং বোট তৈরির হিড়িক পড়েছে। সেখানে বর্তমানে পাঁচটি ফিশিং বোট তৈরি হচ্ছে। এসব বোটের মালিক বদরখালীর সালাহউদ্দিন, মাওলানা আবু তালেব, আবুল কাশেম সিকদার, বাদশা মাঝি ও নজরুল ইসলাম। অপরদিকে বাটাখালী সেতুর দক্ষিনে তৈরী হচ্ছে দুইটি। সবমিলিয়ে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্নস্থানে এবছর অন্তত ৩০টি ফিশিং বোট তৈরি হচ্ছে। তদমধ্যে বনবিভাগের অনুমোদন আছে ৯টির।বদরখালী ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্মিতব্য ফিশিং বোটগুলোর অনুমোদন আছে কি না আমার জানা নেই। তবে বোট গুলো হওয়াতে লোকাল গাছ দিয়ে তৈরি হচ্ছে। সেকারণে অনুমতির প্রয়োজন পড়েনা।

অপরদিকে চোঁয়ারফাড়িতে ফিশিং বোট তৈরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বোট মালিক আক্কাস সওদাগর বলেন, আমার দুইটি নয়, একটি বোট। সেটি তৈরি করতে বনবিভাগ থেকে অনুমতি নিয়েছি।

ফিশিং বোট তৈরিতে বনবিভাগের চোরাই গর্জন গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে এইধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আক্কাস সওদাগর বলেন, চোঁয়ারফাড়িতে যেসব বোট তৈরি হচ্ছে, সব বোটের গাছগুলো বৈধভাবে (বনবিভাগের নিলাম থেকে) সংগ্রহ করা। এখানে অবৈধ কোন গাছ নেই।

জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, উপজেলার সাহারবিল পর্যন্ত আমার নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকা। এর বাইরের অন্যান্য ইউনিয়ন চকরিয়া সুন্দরবন রেঞ্জ দেখভাল করেন। সুতরাং সাহারবিল এলাকার বাইরে যদি কোথাও নতুন করে ফিশিং বোট তৈরি করেন সে ব্যাপারে ওই এলাকার কর্তব্যরত বনবিভাগের লোকজনই আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

পাঠকের মতামত: