ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় শিক্ষার্থীকে বাসায় আটকিয়ে প্রবাসির স্ত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে, আদালতে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার সবুজবাগ এলাকায় অর্নাস পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে বাসায় ডেকে নিয়ে আটকিয়ে মারধরের পর হত্যার ভয় দেখিয়ে তিন সন্তানের প্রবাসির স্ত্রীর সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় ওই শিক্ষার্থী যুবকের কাছ থেকে নিকাহনামা ও তিনটি খালী স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ম্যানিবাগ থেকে নগদ ৪৬ হাজার টাকা, মুল্যবান কাগজপত্র ভোটার আইডি, একটি রেডমি মডেলের মোবাইল সেট ও একটি স্বর্ণের আংটি হাতিয়ে নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছে চকরিয়া পৌরসভার সবুজবাগ এলাকার মালেক টাওয়ার ভবনে। এ ঘটনায় ভিকটিম শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নিশাত (২৫) বাদি হয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছেন। এতে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে দুইজনকে। অভিযুক্তরা হলেন চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম কোনাখালীর মৃত আবদুল হকের মেয়ে উম্মে হাফসা মনি (৩২) ও তাঁর সহযোগি পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের সামসু মিয়ার হাট এলাকার নুরুল আবছারের ছেলে লুৎফুর রহমান রাসেল (৩৮)। ভিকটিম মোহাম্মদ নিশাত কক্সবাজার সিটি কলেজে অর্নাস তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। তার বাড়ি মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সিকদারপাড়া গ্রামে।

শিক্ষার্থী নিশাতের বাবা আবু শামা বলেন, আমার ছেলে নিশাত একজন অনার্সের ছাত্র। নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি সে কক্সবাজারে একটি চাকুরী করছে। পক্ষান্তরে হাফসা মনি আমার ভাতিজা নুরুল কালাম মুন্নার স্ত্রী। ২০০৭ সালে সামাজিক রীতি ও ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক হাফসা মনির সঙ্গে আমার ভাতিজা মুন্নার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তিনটি সন্তানও আছে। বর্তমানে মুন্না সৌদি আরবে রয়েছে। স্বামী বিদেশ যাওয়ার আগে তিন সন্তান নিয়ে হাফসা মাতারবাড়ি শ্বশুড় বাড়িতে থাকতো। কিন্তু স্বামীর অবর্তমানে চলাফেরা ও আচার-আচরণে অনৈতিকতা দেখা দিয়ে শ্বশুড় বাড়ির লোকজন বাঁধা দেন। একপর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া করে চকরিয়া কোনাখালীতে বাপের বাড়িতে চলে যান হাফসা। কিছুদিন পর চকরিয়া পৌরসভার সবুজবাগে মালেক টাওয়ারে বাসা ভাড়া নিয়ে তিন সন্তানসহ বসবাস শুরু করে হাফসা মনি।

মামলার আর্জিতে বাদি মো. নিশাত বলেন, পারিবারিক আত্মীয়তার সুবাদে চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী উম্মে হাফসা মনির সঙ্গে মাঝেমধ্যে ফোনে কথা বলতেন। সন্তানদের খোঁজ খবর নিতেন। এই সুযোগে ২৬ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে আমি কক্সবাজার থেকে মাতারবাড়ি বাড়ি ফিরছিলাম। ওইসময় মোবাইল ফোনে ভাবী হাফসা আমাকে বলে একটু কথা আছে, গাড়ি থেকে নেমে বাসায় আসো, কথা শেষে চলে যেতে পারবে। তার সহজ সরল কথায় আমি সবুজবাগ মালেক টাওয়ারের ভাড়া বাসায় ঢুকা মাত্র উম্মে হাফসা ও তাঁর সহযোগি লুৎফুর রহমান রাসেলসহ আরো ৪-৫জন মিলে আমাকে ব্যাপক মারধরের পর একটি রুমে ধরে নিয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখে।

শিক্ষার্থী নিশাত আরও বলেন, মারধরের পর এসময় তাঁরা হত্যার ভয় দেখিয়ে আমাকে তিন সন্তানের প্রবাসির স্ত্রী (হাফসা মনি) সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে করতে নিকাহনামায় স্বাক্ষর আদায় করে। একই সময়ে তিনটি খালী স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও নিয়েছে হাফসা ও তাঁর সহযোগি রাসেল। এছাড়া বাসার রুমে আটক থাকাবস্থায় তারা ম্যানিবাগ থেকে নগদ ৪৬ হাজার টাকা, মুল্যবান কাগজপত্র ভোটার আইডি, একটি রেডমি মডেলের মোবাইল সেট ও একটি স্বর্ণের আংটি হাতিয়ে নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদির আইনজীবি এডভোকেট হাবিব উদ্দিন মিন্টু। তিনি বলেন, অর্নাসে পড়ুয়া একজন ছাত্রকে বাসায় ডেকে নিয়ে জিম্মি করে প্রবাসির বিবাহিত স্ত্রীকে বিয়ে দেয়ার ঘটনাটি বিজ্ঞ আদালত আমলে নিয়েছেন।
এব্যাপারে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দিতে চকরিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে থানার এসআই কামরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করছেন।

পাঠকের মতামত: