নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় সাতটি কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৪৫টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ৫২টি। এছাড়া বেসরকারি বিদ্যালয় ও মাদরাসাসহ সবমিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে অন্তত আড়াই শতাধিক। অভিযোগ উঠেছে, এ উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। ফলে শিক্ষার্থীসহ আশপাশ এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার নাগরিকরা জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও তার পরবর্তী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এ উপজেলায় এখনো বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়নি স্বাধীনতার অন্যতম স্মৃতির নিদর্শন শহীদ মিনার। এ অবস্থার কারণে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা দেশ মাতৃকার টানে ভাষা দিবস, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সকল বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জাতীয় দিবসগুলো পালনে যথাযথভাবে সুযোগ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা এলাকায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখের কাছাকাছি জনগণের বসবাস। তথ্য প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সারাদেশের মতো চকরিয়া উপজেলাও এখন প্রযুক্তিখাতে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে গত দুই দশকে। অর্থনৈতিক খাতে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে এ উপজেলা। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন হয়েছে আগের চেয়ে অনেকগুণ।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সরকারি-বেসরকারিসহ প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি সরকারি কলেজসহ সাতটি কলেজ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত লক্ষাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়ায় ব্যস্থ রয়েছে প্রতিদিন। সবকিছুতেই সম্ভাবনাময় চকরিয়া উপজেলা এগিয়ে থাকলেও শুধুমাত্র পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের ক্ষেত্রে।
জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ এলাকায় একটি ও বিদ্যাপীঠ স্কুলের সামনে একটি শহীদ থাকলেও উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় এখনো নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। ফলে উপজেলার উপকূলীয় ও দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর জাতীয় দিবস গুলোর গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপজেলা সদরের এসব শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
তবে উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি উচ্চবিদ্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে ইতোমধ্যে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। গত বছর চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাবেক এমপি হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ বদরখালী কলেজে একটি ও উপকূলীয় এলাকার ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি নতুন শহীদ মিনার তৈরি করে দিয়েছিলেন। অপরদিকে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা উচ্চ বিদ্যালয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি আধুনিকমানের শহীদ মিনার উপহার দিয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক লায়ন কমরউদ্দিন আহমদ।
জানতে চাইলে , চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার চকরিয়া নিউজকে বলেন, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৪৫টি । বর্তমানে ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট বিদ্যালয় গুলোতে অচিরেই শহীদ মিনার স্থাপন করা হবে।
জানতে চাইলে , কক্সবাজার জেলার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছালে উদ্দিন চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, জাতীয় দিবসগুলো পালনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা প্রকৈাশল বিভাগ কর্তৃক বর্তমানে অধিকাংশ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে স্থায়ী ভাবে শহীদ মিনার স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে । চকরিয়া উপজেলার মাধ্যমিকস্তরের কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে । তবে চকরিয়ায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো শহীদ মিনার স্থাপিত হয়নি প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও শহীদ মিনার স্থাপন করে দেওয়া হবে ।
জানতে চাইলে , সাবেক চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী আবু মো.বশিরল আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে স্বাধীনতার অন্যতম নিদর্শন শহীদ মিনার না থাকার ব্যাপারটি জাতির জন্য বড় দুর্ভাগ্য। কারণ মহান ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে পারলেও আমরা এখনো জাতি হিসেবে অনেক পিছিয়ে। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সহজে মহান স্বাধীনতা, ভাষা আন্দোলন, বিজয় দিবস ও জাতীয় শোক দিবসের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা পেত।
পাঠকের মতামত: