ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় বনবিভাগের পাহাড়ি উঁচু টিলা ভূমি ধ্বংস করে রেলপথসহ বিভিন্ন প্রকল্পে মাটির জোগান দিচ্ছেন পাহাড় খেকো হাসানুল ইসলাম আদর নামের এক যুবলীগ নেতা।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের রিজার্ভ বনভূমির অন্তত ২০টি ছোট-বড় পাহাড় এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে সাবাড় করে বিরাণভূমিতে পরিণত করেছে আদর। দিনদুপুরে এসব পাহাড়ি মাটি কেটে নিলেও বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনক কারণে অনেকটাই নীরব।

এ অবস্থায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় এবং বর্ষায় ব্যাপক পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

সরেজমিন দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলার কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন ফুলছড়ি রেঞ্জের খুটাখালী, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ডুলাহাজারা, সুরাজপুর-মানিকপুর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নলবিলা বিটের উঁচু পাহাড়ি বনভূমিগুলোর মাটি কেটে পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে।

উপজেলার বরইতলী শান্তিবাজার-কৈয়ারবিল-ছিকলঘাট-কাকারা-ইয়াংছা সড়কের নির্মাণ কাজে মাটি সরবরাহ করছেন আদর। ওই সড়কে রাতদিন অন্তত ২০-২৫টি ডাম্পার ট্রাক প্রশাসনের চোখের সামনে মাটি সরবরাহ করছে। এসব মাটি সরবরাহের কারণে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার অন্তত ১২টি স্পটে বন বিভাগের রিজার্ভ পাহাড়ি বনভূমি কেটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আনলোড করতে সক্ষম এমন ১৫টি বড় ট্রাক প্রতিদিন ওই মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এসব মাটি দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ কাজে নিয়োজিত তমা কনস্ট্রাকশনকে বিক্রি করা হচ্ছে।

ডুলাহাজারা এলাকায় বগাচতর এলাকায় জেলা প্রশাসন থেকে বালু মহাল ইজারা নিয়ে বালির পাশাপাশি পাহাড় কেটে মাটিও বিক্রি করছে ইজারাদার আদরের লোকজন।

বগাচতর এলাকার লোকজন জানান, বালু মহাল ইজারা নিলেও ইজারাদারের লোকজন মাটিকে বালি দেখিয়ে রিজার্ভ বনভূমির মাটি কেটে রেললাইন রাস্তা নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতি ট্রাক বালি বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা, মাটি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।

এদিকে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন রংমহল এলাকায় পার্ক ঘেঁষে পাহাড়ি বনভূমি কেটে মাটি বিক্রি করছে ওই যুবলীগ নেতা। এতে সাফারি পার্কের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, খুটাখালী ইউনিয়নের খোদার ফাঁড়ি ও মেধাকচ্ছপিয়ায় ৫-৬টি পাহাড় স্কেভেটর দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বাকগোলা বাগান, রংমহল ও মালুমঘাট এলাকা থেকে প্রতিদিন ২০-২৫টি ডাম্পার ট্রাক দিয়ে মাটি অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে।

কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় আবাসিক ভবনের জন্য প্লট ভরাট, সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের নিচু জমি ভরাটের কাজে পাহাড় কাটার মাটি ব্যবহার হচ্ছে বলে একাধিক ব্যক্তি জানান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদরের নেতৃত্বে ৪-৫ জন সিন্ডিকেট পাহাড় কেটে সাবাড় করছেন। কিন্তু রাতের বেলায় পাহাড় কাটায় বন বিভাগ কিছুই করতে পারছে না।

যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, বালু মহাল ইজারা নিয়ে আমি বালুর ব্যবসা করছি। পাহাড় কাটার সঙ্গে আমি জড়িত নই।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ির এসিএফ মাসুদ রানা বলেন, ইতোমধ্যে যারা পাহাড় কাটার সাথে সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। অনুমতি মিললে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলার সহকারী পরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই। খবর নিয়ে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: