চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ঃ
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাসগুলোতে চকরিয়াসহ আশপাশের ছয় উপজেলার যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন বরাদ্দ রাখা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি চকরিয়া পর্যন্ত আলাদা বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালুর দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে চকরিয়া পৌরশহরে। গতকাল শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চ’র এই কর্মসূচীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন বেশ কয়েকটি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তন্মধ্যে কালের কণ্ঠ শুভ সংঘ, পিস ফাইন্ডার, ভরামুহুরী মহামায়া সংঘ, ফাঁসিয়াখালীর সততা স্পোর্টিং ক্লাব, পিসফুল ইউনাইটেড ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে যাত্রীবাহী বাসে করে চকরিয়ায় আসার জন্য পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয় চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার যাত্রীসাধারণকে। এসব উপজেলার যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন (সিট) বরাদ্দ না থাকা, থাকলেও একেবারে পেছনে বসতে বাধ্য করা, এসব যাত্রীকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে আসন নিতে বাধ্য করাসহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। বছরের পর বছর ধরে বৈষম্যমূলক ও অমানবিক এই আচরণ করছে এই সড়কে চলাচলরত বাসগুলো। এতে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছুতে না পারা, চরম বৈষম্যের শিকার হওয়াসহ প্রতিনিয়ত ভোগান্তি মাথায় নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে চকরিয়াসহ আশপাশের উপজেলার যাত্রীসাধারণের।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাফিয়া বেগম শম্পা, চকরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ ক ম গিয়াস উদ্দিন, স্বাধীন মঞ্চ’র স্বপ্নদ্রষ্টা তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন, কালের কণ্ঠ’র সাংবাদিক ছোটন কান্তি নাথ, কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম ও সহ-সভাপতি বিপ্লব দাশগুপ্ত, পিস ফাইন্ডারের প্রতিষ্ঠাতা আদনান রামিম, উপজেলা যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন হেলালী, যুবলীগ নেতা নাঈমুল সিকদার। উপস্থিত ছিলেন সাইফুল করিম শিমুল, হাসনাত মো. ইউসুফ, নাহিয়ান, বাসু দাশ, রনজয় দাশ, আবদুল আজিজ আজাদ, তানভীর হাসান রিফাত, আমজাদ শাহরিয়ার জুয়েল, ছাত্রলীগ নেতা আবদুল বারেক টিপু, আবির মোহাম্মদ, সাদ্দাম হোসেন, এস এ শামীম, উত্তম দে, প্রকাশ দাশসহ কয়েকশত যুবক ও সাধারণ মানুষ।
জনবান্ধব এই কর্মসূচীর উদ্যোক্তা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চ’র প্রতিষ্ঠাতা তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে চকরিয়াসহ আশপাশের উপজেলার যাত্রী-সাধারণ প্রতিদিন চট্টগ্রামে যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। তাই এই দাবিতে আমরা মাঠে নেমেছি মানবন্ধন কর্মসূচীর মাধ্যমে। এই মহাসড়কে চলাচলরত এস আলম, সৌদিয়া, মারছা, হানিফ, শ্যামলী, ইউনিক পরিবহনসহ অন্যান্য বাসগুলোতে চকরিয়াসহ এই অঞ্চলের যাত্রীদের জন্য এসব বাসে আলাদা আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে। এজন্য বাস কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাধীন মঞ্চ’র পক্ষ থেকে স্মারকলিপিও দেওয়া হবে। তাই আগামী একমাসের মধ্যে এই দাবি পূরণ না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচী নিয়ে আমরা মাঠে নামবো।’
তুহিন বলেন, ‘বেসরকারি যাত্রীবাহী বাসের এই সমস্যা নিরসন ছাড়াও সরকারিভাবে বিআরটিসি যাতে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি চকরিয়া পর্যন্ত আলাদা বাস সার্ভিস চালু করে সেই দাবিও রয়েছে আমাদের। সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
কক্সবাজার জেলা পরিবহন শ্রমিক নেতা ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, ‘আমার বাড়িও চকরিয়া পৌরসদরে। এখানকার মানুষের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। তাই যাত্রীদুর্ভোগ কমাতে আমার পক্ষ থেকেও যথাসাধ্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়া পর্যন্ত সরাসরি আলাদা বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের এমপি আলহাজ জাফর আলম বলেন, ‘এতদাঞ্চলের যাত্রী-সাধারণের দীর্ঘদিনের এই সমস্যা নিরসনকল্পে আমার পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বিষয়টি জাতীয় সংসদেও উত্থাপন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টিতে আনবো।’
পাঠকের মতামত: