ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন চকরিয়া আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয়টি এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ বাণিজ্য, দালালচক্রের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ অফিসে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা দূর্নীতিবাজ আবাসিক প্রকৌশলীর হাতে প্রায় সময় তার অফিসে ঘুষ বানিজ্যের প্রতিবাদ করায় চরমভাবে লাঞ্চিত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এ উপজেলার আভ্যান্তরিণ সড়ক গুলোতে চলাচলরত সহ¯্রাধিক ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও টমটম গাড়ির চার্জ দেওয়ার জন্য গড়ে উঠা প্রায় অর্ধশতাধি গ্যারেজ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই দূর্নীতিবাজ আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এসব টমটম গ্যারেজে ব্যবহার করা বিদ্যুতের ঘাটতি পুরণ করতে সাধারণ গ্রাহকদেরকে অতিরিক্ত বিলের বোঝা বহন করতে হচ্ছে।
এ অফিসটিকে ঘিরে দালালচক্র কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যুৎ সংযোগের নামে মিটার, বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি বাণিজ্য। সংযোগের জন্য ২০ হাজার থেকে লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তারপরও মিলছে না বিদ্যুৎ সংযোগ। আবাসিক প্রকৌশলীর নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির ব্যাপারে অভিযোগ তুলে অবিলম্বে তার অপসারণ ও শাস্তির দাবী জানিয়ে পৌরসদরে মানব বন্ধন কর্মসূচীও পালন করেছে এলাকাবাসী।
এদিকে বিদ্যুৎ অফিসের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠায় দেবানন্দ দত্ত নামের বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে। আরো অধিকতর তদন্তের জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
চকরিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও সরেজমিনে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আবাসিক প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো প্রতিটি এলাকায় কিছু সংখ্যক দালাল নিয়োগ করে আবাসিক ও বাণিজ্যিকসহ বিভিন্ন সংযোগের জন্য মিটার প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ঘুষের টাকা না দিলে মিটার ও তার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে সময় পার করছেন মাসের পর মাস। এমন কি লাখ টাকা আদায়ের এক বছর পরও মিটার সরবরাহ দেওয়া হয়নি।
ভুক্তভোগীরা জানান, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ট্রান্সফর্মার পরিবর্তন করতেও তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ বাণিজ্যের বিষয় নিয়ে সাধারণ গ্রাহকের সাথে তার মাঝে মধ্যেই বাকবিতন্ডার ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় তার অপসারণ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবীতে মিছিল ও মানববন্ধন চালিয়ে যাচ্ছে গ্রাহকরা। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের এসব আন্দোলন ঠেকাতে আবাসিক প্রকৌশলী তার সৃষ্ট দালালদের দিয়ে পাল্টা কর্মসূচী পালন করছে। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ছৈয়দ আলম জানান, ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিদ্যুতের দুটি মিটার নেওয়ার জন্য আবাসিক প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো’র পরামর্শে ওই অফিসের বিদ্যুত বিল সরবরাহকারী দেবানন্দ দত্তের নামে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন। (চেক নং-৩৪৬৬৪৫৭)। কিন্তু তাকে একবছর পরও মিটার দেওয়া হয়নি। এঘটনায় তিনি চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। ছৈয়দ আলম জানান, মামলা দায়েরের পর আবাসিক প্রকৌশলী তার সৃষ্ট দালালদের দিয়ে তাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।
চকরিয়া পৌরশহরে নির্মাণাধীন ‘চকরিয়া জনতা শপিং টাওয়ার’র প্রকৌশলী তারা শংকর ভাদুড়ী জানান, তিনি ওই মার্কেটের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল বাবদ দেড় লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা জমা দেন। কিন্তু মিটারে রিডিং কমানো হয়নি। এ ঘটনায় তিনি বিষয়টি জানার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ গেলে আবাসিক প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো তাকে অপমান করে বের করে দেন।
চিরিংগা এমদাদুল উলুম মহিচ্ছুন্নাহ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠান প্রধান আলহাজ্ব মাওলানা আনোয়ার আলম জানান, তিনি তার মাদ্রাসার বিদ্যুৎ বিল ব্যাপারে জানতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসে গেলে তাকে চরম অপমান করে বের করে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে চকরিয়া বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো বলেন, মিটার সংযোগের ব্যাপারে কারো কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি তিনি অবগত নন। এ অফিসে কোন অনিয়ম দুর্নীতি হয়নি বলেও জানান তিনি। ##

পাঠকের মতামত: