ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় পানিতে তলিয়ে আছে শতশত ঘরবাড়ি

চকরিয়ায় পাঁচলাখ মানুষ পানিবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক :: টানা ভারী বর্ষণ ও পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে চকরিয়ার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার প্রায় ৮০ শতাংশই এখন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ ১০ ফুট পর্যন্ত এলাকা তলিয়ে রয়েছে বানের পানিতে। পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলারও ৪টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে পেকুয়া-চকরিয়া সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে স্থানীয় লোকজন। বান্দরবানে জেলা সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং আলীকদম চারটি উপজেলায় বন্যায় পানিতে তলিয়েছে শতশত ঘরবাড়ি। গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয়দিনের মত পাহাড়ী ঢলে সড়কে ধস, পাহাড় ধস এবং বন্যার পানিতে সড়ক ডুবে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা এবং আলীকদম উপজেলায়।

চকরিয়া উপজেলার শতশত বাড়িঘরের চালা পর্যন্ত ডুবে গেছে পানিতে। বন্যার ভয়াবহতা থেকে জান বাঁচাতে প্রায় লাখো মানুষ, গবাদী পশু বিভিন্ন উঁচু সড়ক, ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দোতলায়, সাইক্লোণ শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। মাতামুহুরী নদী তীরের প্রতিরক্ষা বাঁধগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে ব্যাপক এলাকায় হু হু করে প্রবেশ করছে বানের পানি। এদিকে উপজেলার চিংড়িজোনের প্রায় ২০ হাজার একর চিংড়িঘের, পাঁচ শতাধিক পুকুরের মৎস্যপ্রকল্প তলিয়ে গেছে বানের পানিতে।

এই অবস্থায় একেবারে ভেঙে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ গাছ-বাঁশের ভেলা ও নৌকায় চেপে যাতায়াত করছেন। বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছপালা উপড়ে পড়ায় দুইদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। টিউবওয়েল এবং বাড়ি পানিতে ডুবে থাকায় চুলোয় হাড়িও চড়ছে না। এতে বন্যাকবলিত মানুষগুলোর মাঝে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।

উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে শুকনো ও রান্না করা খাবার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এই পরিস্থিতিতে নানামুখি সংকটের মধ্যে নিপতিত হয়েছেন বানভাসি মানুষগুলো।

পেকুয়া প্রতিনিধি জানান, মাতামুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে পড়ে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া, সদর ইউনিয়ন ও শিলখালী ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও এসব ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

লামা-আলীকদম প্রতিনিধি জানান, অব্যাহত ভারী বর্ষণে বান্দরবানে সাঙ্গু, মাতামুহুরী এবং বাকখালী তিনটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত এলাকাগুলোতে বন্যার পানি ক্রমশ বাড়ছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বান্দরবান জেলায়। জেলা সদরের শেরেবাংলানগর, ইসলামপুর, আর্মীপাড়া, বনানীসমিল এলাকা, লামা উপজেলার হাসপাতালপাড়া, বাজারপাড়া, মধুঝিরি, রুপসী পাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, বাইশারী, সোনাইছড়ি এবং আলীকদম উপজেলার শীলেরতোয়া, লাইনঝিরি এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার।
অপরদিকে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি এবং সদর উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে পড়েছে। পাহাড় ধসের ঝুকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে প্রশাসন এবং বান্দরবান ও লামা পৌরসভার পক্ষ থেকে। জেলার সাতটি উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে খোলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: