অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা সন্ত্রাসী মিজান গ্রেপ্তার ও উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র:
ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::
চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানা পুলিশের একটি অভিযানিক দল প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে একজন ভিকটিমকে চকরিয়ার অপহরণকারী-সন্ত্রাসীচক্রের জিম্মিদশা থেকে অসুস্থ অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করেছে। এ সময় জব্দ করা হয়েছে অপহরণের ব্যবহৃত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গুলি, ধারালো অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। এ ঘটনায় ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে এবং পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান সোহেল রানা বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় পৃথক দুটি মামলা রুজু করেছেন। এর পর অপহরণচক্রের মূল হোতা ধৃত মিজানুর রহমানকে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
এর আগে পাঁচলাইশ থানাধীন বহদ্দারহাটের শুলকবহর এলাকার শ্যালকের বাসা থেকে গত ৩০ মে সকালে বের হয়ে নিজের মালিকানাধীন পিকআপ চালিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় আসেন বিদেশফেরত নূর হোসেন (৪৬)। এদিন সকাল এগারটার দিকে সেখানে পৌঁছলেই পূর্ব পরিচিত জনৈক সন্ত্রাসী মিজানুর রহমানসহ অপহরণকারী চক্রের কবলে পড়েন নূর হোসেন।
পাঁচলাইশ থানার পুলিশ জানায়, এ সময় ভিকটিম নূর হোসেনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয় অপহরণচক্রের মূল হোতা মিজানের চকরিয়ার পৌরসভার পালাকাটার ইমাম উদ্দিন পাড়ার নিজ বাড়িতে। সেখানে একটি কক্ষে বিবস্ত্র করে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলির সামনে রেখে ছবি তোলার পর খাটের সাথে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
পুলিশ আরো জানায়, এর পর ভিকটিম নূর হোসেনের স্ত্রীর কাছে ফোন করে বিকাশ নম্বর দিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হয় নগদ এক লাখ টাকা। সেই দাবিমতে প্রথমে স্ত্রী ১০ হাজার এবং পরবর্তীতে আরো ৫০ হাজার টাকা প্রেরণের জন্য চাপ দিলে ভিকটিমকে জীবিত উদ্ধারে স্ত্রীসহ পরিবার সদস্যরা সেই টাকা দিতে রাজি হয় এবং শ্যালক বেলাল উদ্দিন সাজু পাঁচলাইশ থানার দ্বারস্থ হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী রুজু করে। পরে পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ভিকটিম এবং প্রেরিত বিকাশ নাম্বারের লোকেশন শনাক্তের পর ভিকটিমকে জীবিত উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারে ফাঁদ পাতা হয়।
পাঁচলাইশ থানার পুলিশ পরিদর্শক কবিরুল ইসলাম ও এসআই লুৎফুর রহমান সোহেল রানার নেতৃত্বে একটি দল এই ফাঁদ পাতেন। অবশেষে মুক্তিপণের ৫০ হাজার টাকা বিকাশের দোকান থেকে নিতে এসে মূল হোতা সন্ত্রাসী মিজানুর রহমান আটকা পড়েন পুলিশের জালে। এর পর তাকে নিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধারে বাড়িতে অভিযান শুরু করে। সেই অভিযানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ভিকটিম নূর হোসেনকে। এ সময় বাড়ি তল্লাশী করে উদ্ধার করা হয় অপহরণের সময় ব্যবহৃত দেশে তৈরি দুটি কাটা রাইফেল, বিভিন্ন মডেলের ১৩ রাউন্ড তাজা গুলি, একটি করে দা ও ছোরা, সাইকেলের চেইন এবং হ্যান্ডকাপের একটি অংশও।
ভিকটিমের শ্যালক চট্টগ্রাম জজ আদালতের শিক্ষানবীশ আইনজীবী বেলাল উদ্দিন সাজু জানান, শুলকবহরের তাঁর বাসা থেকে দুলাভাই নূর হোসেন নিজের গাড়ি পিকআপ চালিয়ে চকরিয়ায় গিয়েই অপহরণকারী-সন্ত্রাসী চক্রের কবলে পড়ে। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। এর পর পুলিশ তাকে উদ্ধারে প্রযুক্তির সহায়তা ও সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। এরইমধ্যে মুক্তিপণ হিসেবে চক্রটি দাবি করে নগদ এক লাখ টাকা। যার সবকিছুই পুলিশ পর্যবেক্ষণ করে দুলাভাইকে জীবিত উদ্ধারে অগ্রগামী হয়।
শ্যালক বেলাল উদ্দিন সাজু আরো জানায়, তাঁর দুলাভাই নূর হোসেন টেকনাফের হোয়াইক্যাং ইউনিয়নের কেরুনতলীর স্থায়ী বাসিন্দা। ব্যবসার কারণে মাঝেমধ্যে তার ভাড়া বাসায় থাকতেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির জানান, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়কারী-সন্ত্রাসী চক্রের মূল হোতা মিজানুর রহমানের প্রেরিত বিকাশ নাম্বারের অবস্থান শনাক্ত করা হয় প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে। এর পর থানার জিডিমূলে ভিকটিমকে উদ্ধারে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের একটি দল অপহরণকারীদের ধরতে ফাঁদ পাতে এবং সেই পাঁতা ফাঁদে আটকা পড়ে অপহরণকারী-সন্ত্রাসীচক্রের মূল হোতা মিজানুর রহমান। এর আগে চকরিয়া থানার পুলিশেরও সহায়তা নেওয়া হয় এই অভিযান পরিচালনাকালে।
ওসি পাঁচলাইশ জাহিদুল কবির চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমার সার্বিক দিক-নির্দেশনায় পাঁচলাইশ থানা পুলিশের চৌকষদল ব্যাপক তৎপরতার মাধ্যমে অবশেষে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ভিকটিম নূর হোসেনকে।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ভিকটিম নূর হোসেনকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী-সন্ত্রাসীচক্রকে ধরতে পাঁচলাইশ থানা পুলিশকে যথাযথ সহায়তা দেওয়া হয়। অভিযানের সময় অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসী ও অপহরণচক্রের মূল হোতা মিজানুর রহমানকে বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।’
পাঠকের মতামত: