কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে একটি ফুটস্রে দোকানের কর্মচারীর বিরুদ্ধে মালিকের অগোচরে দোকান থেকে বিক্রির প্রায় ৫০লাখ টাকা চুরির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আদালতে দোকান মালিকের দায়ের করা নালিশী মামলার (সিআর ১১৫৮/১৫) প্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা অভিযুক্ত দোকান কর্মচারীর ব্যাংক হিসাব তল্লাসি করতে গিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি তদন্তে প্রমাণিত হয়। তদন্তে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনধারী ওই কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। দোকানে চাকুরী নেয়া ও পরে টাকা চুরির অপরাধে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে ওই কর্মচারী তার নামীয় ব্যাংক হিসাব নাম্বারে ৭২,২১৮৮৫ টাকার লেনদেন করেছেন বলে তদন্তে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। চলতিবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল মান্নান আদালতের কাছে তার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ওই প্রতিবেদনে সেই দোকান কর্মচারীকে টাকা চুরির মাধ্যমে আত্মসাতের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে মামলার অপর তিনজন আসামির বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা নেই বলে প্রতিবেদনের উল্লেখ্য করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
কৃর্তিমান এই দোকান কর্মচারী হলেন, উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের মাইজ কাকারা গ্রামের আব্বাস আহমদের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত ওরফে আপেল মিয়া। তার নামীয় ব্যাংক একাউন্ট হচ্ছে চকরিয়াস্থ ঢাকা ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব (নম্বর-০০৮২২০০০০০০১৪৮০০)। অভিযুক্ত এ কর্মচারী চাকুরী করতেন চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা জনতা মার্কেটপাড়া গ্রামের সোলতান আহমদের ছেলে মো.ওসমানের ফুটস্রে দোকানে। দোকান মালিক আপন খালাতো ভাই হওয়ায় অভিযুক্ত কর্মচারী আপেল মিয়াকেই ব্যবসার পুরো দায়িত্ববার তুলে দেন। এ সুযোগে আপেল মিয়া দিনের পর দিন দোকানের মালামাল বিক্রির টাকার একটি অংশ নিজ নামীয় ব্যাংক একাউন্টে জমা করতেন। এভাবে প্রায় পাঁচবছরে ৫০লাখ টাকা চুরির মাধ্যমে আত্মসাত করেন আপেল মিয়া। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, চুরির টাকায় ইতোমধ্যে আপেল মিয়া মাইজ কাকারাস্থ গ্রামের এলাকায় আলীশান বাড়ি তৈরী করেছেন। কয়েকটি স্থানে বিপুল জায়গা-জমিও কিনেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাকা চুরির ঘটনাটি একটু দেরীতে হলেও দোকান মালিক ওসমান টের পেয়ে যায়। এরপর চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য চাপাচাপি ও শালিস বিচারের বৈঠক শুরু করলে কৌশলী কর্মচারী আপেল মিয়া ও তার বাবা আব্বাস আহমদ চক্রান্তের আশ্রয় নেন। মুলত দোকান থেকে চুরির মাধ্যমে আত্মসাত করা টাকা না দেয়ার জন্য ছেলে আপেল মিয়াকে অপহরণ পুর্বক আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রথমে একটি নালিশী অভিযোগ (নম্বর জিআর ৫৫২/১৫) দায়ের করেন কৌশলী আব্বাস আহমদ। এতে আসামি করা হয় দোকান মালিক ওসমান, তার ভাই নাছির উদ্দিন, কফিল উদ্দিন, প্রতিবেশি জসিম উদ্দিন ও দোকান মালিক পক্ষের বিচারক স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিমকে। পরে আদালতের নির্দেশে চকরিয়া থানার ওসি অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করে এটি তদন্তের দায়িত্ব দেন থানার এসআই মাহাবুবুর রহমানকে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার এসআই মাহাবুবুর রহমান দুই পক্ষের বিচারক, মামলার বাদি, বিবাদি ও স্বাক্ষীদের কাছ থেকে মামলার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে ফৌজদারি ১৭৩ধারা মতে আদালতের কাছে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। পুলিশের ওই প্রতিবেদনে মামলার বাদি আব্বাস আহমদের পক্ষে যতেষ্ট দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ কারনে আগেভাগে মামলাটিতে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা আঁচ করতে পেরে বাদি আব্বাস আহমদ ও তার ছেলে আপেল মিয়া নুতন চক্রান্তের পরিকল্পনা গ্রহন করেন।
দোকান মালিক মো.ওসমান অভিযোগ করে জানান, আগে দায়ের করা মামলায় হেঁরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় এবং আমার দোকান থেকে চুরির মাধ্যমে আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দিতে হবে এই ভয়ে সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল নতুন একটি অপহরণ ঘটনা সাজান দোকান কর্মচারী আপেল মিয়া ও তার বাবা আব্বাস আহমদ। ওইদিন চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারাস্থ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের সামনে ছেলে আপেল মিয়াকে অপহরণ করার অভিযোগে ১০এপ্রিল উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নতুন একটি মিথ্যা অপহরণ মামলা দায়ের করেন তার বাবা আব্বাস আহমদ। দোকান মালিক মো.ওসমান জানান, ওই মামলায় যথারীতি আসামি করা হয় টাকা চুরির ঘটনায় তার পক্ষের বিচারক স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম এবং তাকে (দোকান মালিক ওসমান) ও তার তিনভাই যথাক্রমে ইউনুছ, কফিল উদ্দিন ও নাছির উদ্দিনকে। মামলাটিতে ঘটনাস্থলের কাউকে স্বাক্ষী করা না হলেও কাকতলীয় ভাবে স্বাক্ষী দেখানো হয়েছে দোকান কর্মচারী আপেল মিয়ার স্বজন কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা পাঁচজনকে। যদিও মামলার এজাহারে ঘটনাস্থলে এসব স্বাক্ষী কেউ ছিলেন না। আদালত বাদির অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, দোকান মালিক ও অভিযুক্ত কর্মচারী তাঁরা দুইজনই আপন খালাতো ভাই। দোকানে চাকুরী করার সুবাদে কর্মচারী আপেল মিয়া মালিক ওসমানের অগোচরে বিপুল টাকা চুরির মাধ্যমে আত্মসাত করেন। ঘটনাটি আমরা পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অভিযুক্ত কর্মচারী আপেল মিয়া ও তার বাবা আব্বাস আহমদ এতে রাজী হয়নি। পরে তাঁরা চক্রান্তের আশ্রয় নিয়ে উল্টো দোকান মালিকের বিরুদ্ধে কয়েকটি সাজানো মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, আমি দোকান মালিক পক্ষের বিচারক হওয়ার কারনে কতিপয় মহলের ইন্ধনে বারবার মিথ্যা মামলা গুলোতে দোকান মালিক পক্ষের সাথে তাঁরা আমাকেও আসামি করছে। মুলত আত্মসাতকৃত টাকা গুলো ফেরত না দেয়ার জন্য অভিযুক্ত কর্মচারী আপেল মিয়া ও তার বাবা এসব মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। তিনি এব্যাপারে প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। #
পাঠকের মতামত: