নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনভূমির ওপর গড়ে উঠা ডুমখালীর রিজার্ভ পাড়াটি এখন ডাকাত-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। একাধিক দলে বিভক্ত এসব ডাকাত-সন্ত্রাসী পুরো ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের পাশাপাশি আশপাশের উপজেলাগুলোতেও অপরাধ সংঘটিত করে আসছে।
অভিযোগ রয়েছে- প্রতিনিয়ত মাদকের কারবার, ডাকাতি, গরু চুরি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, বনভূমি দখল-বেদখল, বনের গাছ নিধনসহ নানা অপরাধকর্ম করছে এসব ডাকাত-সন্ত্রাসী। এমনকি ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালীস্থ রিভার্জ পাড়ার নিরীহ পরিবারগুলোর কিশোরী-যুবতী নারীরাও তাদের কাছে অনিরাপদ। ডাকাত-সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতায় অতিষ্ট অভিভাবকেরাও প্রতিনিয়ত শঙ্কায় থাকেন তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শান্তির জনপদ ডুলাহাজারা ইউনিয়নে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপরাধীরা। এসব ডাকাত-সন্ত্রাসীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছে। পাশাপাশি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়েও তারা নিজেরা রক্তারক্তিতে লিপ্ত হচ্ছে।
সর্বশেষ গত সোমবার রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবদমান সশস্ত্র দুই ডাকাতদলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় একপক্ষের ছোড়া গুলিতে ও ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত হয় একাধিক মামলার আসামি বাহিনী প্রধান আমির হোসেন (৪৫)। তিনি ডুমখালী রিজার্ভপাড়ার কবির হোসেনের ছেলে। আবদুর রহমান বাহিনীর সদস্যদের হাতে আমির হোসেন নিহত হওয়ার পর তার বাহিনীর সদস্যরা মালুমঘাট বাজারে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক তাণ্ডব ও লুটপাট চালায়।
স্থানীয় লোকজনের শঙ্কা- আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাহিনী প্রধান আবদুর রহমানের সশস্ত্র ডাকাত-সন্ত্রাসীদের হাতে আমির হোসেন নিহত হওয়ার পর থেকে তার বাহিনীর সদস্যের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে বড় ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির পাশাপাশি ডাকাত-সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে চিরুনি অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছেন আতঙ্কিত লোকজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডুমখালী রিজার্ভ পাড়ার এক মাদরাসা শিক্ষক বলেন, প্রতিনিয়ত অপরাধকর্ম চালাচ্ছে সশস্ত্র এই ডাকাত-সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা দুটি বাহিনী। তাদের রয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ রকমারি অস্ত্রের ভাণ্ডার। দিনের বেলায় পুরো রিজার্ভ পাড়া একেবারে সুনসান নীরবতার মনে হলেও সন্ধ্যার পর থেকে ভিন্নরূপের হয়ে উঠে পরিবেশ। বাহিনী দুটির সশস্ত্র সদস্যরা প্রতিনিয়তই পাড়ার অসহায় পরিবারগুলোর কিশোরী-যুবতীদের তুলে নিয়ে হরণ করছে সতীত্ব। এতে অসহায় হয়ে পড়া অভিভাবকেরা মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে এসব কর্মকাণ্ড।
কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ জানান, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের অতীত রেকর্ডে রিভার্জ পাড়া নামের কোনো পাড়া ছিল না। মূলত আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে সংরক্ষিত বনভূমি উজাড়ের পর অবৈধভাবে তা দখলে নিয়ে শত শত বসতি স্থাপন করা হয়। ডুলাহাজারা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডেই ডুমখালী রিজার্ভ পাড়ার অবস্থান। এটি কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কার্যালয়ের একেবারেই কাছে।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে পরাজিত একাধিক প্রার্থীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা এসব চিহ্নিত ডাকাত-সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে এলাকার আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে ডুমখালী রিজার্ভ পাড়ায় অন্তত অর্ধ শতাধিক ডাকাত-সন্ত্রাসী পুরো ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। তাদের এই অপতৎপরতায় জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
পরিকল্পিতভাবে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার এবং অবৈধ অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা না হলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে ডুলাহাজারাবাসী। তিনি বলেন, এসব বিষয় সম্প্রতি চকরিয়া থানায় অনুষ্ঠিত ওপেন হাউজ ডে-অনুষ্ঠানে সবিস্তারে তুলে ধরেছি জেলা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ সময় তালিকা করে ডাকাত-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী চকরিয়া নিউজকে জানান, সোমবার রাতের ঘটনার পর থেকে অতিরিক্ত পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। তবে পুলিশ বেশ তৎপর রয়েছে। প্রতিপক্ষের গুলিতে ডাকাত আমির হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে প্রস্তুতি চলছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ওপেন হাউজ ডে-তে স্থানীয় চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতসহ অপরাধীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে ঘটে গেছে বিবদমান দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা। তাই পরিকল্পিতভাবে সাঁড়াশি অভিযান জোরদারের মাধ্যমে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশ যথাসাধ্য তৎপর রয়েছে।
পাঠকের মতামত: