নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতাসের ছোবলে লন্ড ভন্ড হয়ে যায় উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন গুলো। এ সময়ে উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে গাছ চাপায় একব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বাতাসের গতি বাড়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন ঘর মুখো মানুষ অন্ধকারে সমস্যায় পড়ে। সে থেকে টানা ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চরম দূর্ভোগে পড়েছে মানুষজন।
প্রশাসন ও আবহাওয়া অধিদপ্তরে পূর্বের প্রস্তুতি না থাকায় এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হামুনের তান্ডব চলে। সাথে মষুল ধারে বৃষ্টিপাত হয়। রাত ১২ টায় বৃষ্টি কমলে উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন ভেসে উঠে।
জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকুলে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় হামুনের পূর্বাবাসটি সতর্কতা বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তেমন জোরালো প্রচার ছিল না। ফলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ আঘাত হানে হামুন। এর আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে চকরিয়া উপজেলা উপকুলীয় এলাকা সহ ১৮ ইউনিয়ন। এর মধ্যে হামুনের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূলীয় ইউনিয়ন গুলো। গাছ চাপা পড়ে বদরখালী ইউনিয়নের ৪নং ব্লকের বাসিন্দা আসকর আলী নামের একব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
এসব ইউনিয়ন গুলোতে বাতাসের তিব্রতায় শতশত গাছপালা উপড়ে গেছে ও ঢালপালা ভেঙ্গে পড়ে। সড়কের উপর গাছ পড়ে থাকায় বেশিরভাগ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক ঘরের চাল ও ঘেরা বেড়া উড়ে গেছে। শতাধিক গাছ ভেঙ্গে গছে। ২০০ শতাধিক ঘর ভেঙ্গে বাতাসের সাথে উড়ে গেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চালা উপড়ে গেছে। ২০টির অধিক বিদ্যুৎ খুটি ভেঙ্গে গেছে। পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের লাইন বিছিন্ন হয়ে যাওয়ায় মানুষ বিপাকে পড়েছে।
পৌর এলাকার বেশির ভাগ বাসা বাড়ির পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পুন:স্থাপিত হয়নি। বিদ্যুতের তারের উপর গাছ ও ঢালফালা পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চকরিয়া বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরু নবী।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বিদ্যুত লাইন বিছিন্ন রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাসা বাড়ি, ব্যবসা সরকারি ও বেসরকারি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ সব প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ পুন:স্থাপনে বিদ্যুৎ কর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন আরিফ জানান, তার ইউনিয়নের ৪নং বøকে গাছ ছাপায় আসকর আলী নামে একব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বেশকিছু ঘর ভেঙ্গে গেছে। শতশত গাছ পড়ে গেছে। চিংড়িঘের গুলোতে আঘাত হেনেছে। অনেক ঘেরের বাধ জোয়ারের পানিতে ভেঙ্গে গেছে। ক্ষতির পূর্বের সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানান, তার ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ব্রিজটি ভেঙ্গে গেছে।
চকরিয়ার পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানান, হামুন থাবায় পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ডের কাচা আধা পাকা বাড়ির চালার টিন উড়ে গেছে। ঘেরা বেড়া উপড়ে গেছে। পৌরশহরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোর বেশির ভাগ সাই বোর্ড উপড়ে গেছে। গাছে ঢাল ফালা ভেঙ্গে পড়ে অনেক সড়কে যান চলাচর বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও আসেনি।
রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চকরিয়ার টিম লিডার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা জানান, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগর ঘোনা বুড়িপুকুর, চরন্ধীপ, রামপুর, বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, ডেমুশিয়া কোনাখালীসহ উপকুলীয় ইউনিয়ন গুলোতে তাদের সেচ্ছসেবক দল সতর্কতা বার্তা দিয়ে যাওয়ায় ক্ষতি তেমন হয়নি। মানুষজনকে তারা আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে চলে যেতে বলেন। তবে কম সংখ্যক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাঠকের মতামত: