ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি

চকরিয়ায় গোপনে ইউনিয়ন পরিষদের গোদী নিলাম

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ন্ত্রনাধীন বিতর্কিত বানিয়ার ছড়া গোদীটি এবছর কোনধরণের প্রচার প্রচারনা ছাড়াই অতি গোপনে নিলাম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গেলবছর দুই লাখ টাকার উপরে গোদীটি নিলাম দেয়া হলেও এবার গ্রহীতার সাথে গোপন আঁতাত করে অর্ধেকমুল্যে নিলাম দেখিয়ে মোটা অঙ্কের বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এতে সরকারের কমপক্ষে লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনসাধারণ।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, সঠিকসময়ে মাইকিং এবং ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে গোদীটি নিলাম দেয়া হলে ডাককারীর সংখ্যা যেমন বাড়তো, তেমনি এবছর ইউনিয়ন পরিষদ কমপক্ষে ৩ লাখ টাকায় গোদীটি নিলাম দিতে পারতো। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান অতিগোপনে তাঁর পছন্দের বহিরাগত ভিন্ন উপজেলার ইজারাদারকে গোদীটি নামমাত্র মুল্যে মাত্র দেড় লাখ টাকায় দিয়েছেন। এইধরণের অভিযোগ তুলে গত ৪ জুলাই চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাবেক নিলাম গ্রহীতা নুরুল ইসলাম।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দায়েরকৃত অভিযোগে জানা যায়, গেলবছর বাংলা বছরের জন্য গোদীটি নিলাম হয়েছে দুই লাখ টাকার উপরে। তাঁর আগে ১৪২৫-২৬ বঙ্গাব্দে আড়াই লক্ষে নিলাম হয়েছিল। এই আদলে চলতিবছর ও উম্মুক্ত নিলাম হলে সরকারী নিয়মে শতকরা ৫% ভাগ বৃদ্ধি সহ তিন লাখ টাকার উপরে নিলাম হতো।

কিন্তু লকডাউন সময়ে এবছর কোনধরণের মাইকিং ও ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা না করে এমনকি বর্তমান (চলমান) নিলাম গ্রহীতাকে অবহিত না করে অতিগোপনে পেছনের তারিখ দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার নামমাত্র দেড়লাখ টাকায় অর্থাৎ আগের বছরের অর্ধেকমুল্যে গোদীটি নিলাম দিয়েছেন।

ভাগ্যবান ডাককারী হিসেবে ইতোমধ্যে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রেরিত পত্রে ১৪২৮ বঙ্গাব্দের জন্য স্বারক নং চ,ইউ,পি /চক/কক্স–স্মারক ০৪-১২৪/২০২১ তাং ৭/৪/২০২১, সিদ্ধান্ত ০৪/৪/২০২১, নিলাম গ্রহীতা জামাল উদ্দিন পিতা মৃত আবুল হোসেন, সাং ৩০৬ নং ফাইতং, নয়াপাড়া লামাকে বিবেচিত করা হয়েছে।

অভিযোগকারী চলমান ইজারা গ্রহীতা নুরুল ইসলাম ও স্থানীয় লোকজনের দাবি, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের গোদীটি গোপনে ভিন্ন উপজেলার লোককে দেবার কারনে একদিকে সরকার হারিয়েছে লাখ টাকার রাজস্ব, অন্যদিকে এলাকার লোকজন হারিয়েছে কর্মসংস্থান।

এব্যাপারে সাবেক নিলাম গ্রহীতা নুরুল ইসলাম দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ছাড়াও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একইসঙ্গে গোপনে প্রচারনা ছাড়া দেয়া ইজারা বাতিল করে অবিলম্মে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে গোদীটি নিলাম দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ম মোতাবেক সকল সদস্যদের (মেম্বারদের) মতামত এবং সিদ্বান্তের আলোকে রেজুলেশন করে গোদীটি নিলাম দেয়া হয়েছে। পরিষদের সদস্যরা এব্যাপারে অবগত আছেন। এখানে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি।

গোদীটি নিলাম দেয়ার আগে এলাকায় মাইকিং বা প্রচার-প্রচারনা চালিয়েছেন কিনা? আগের চেয়ে কম মুল্যে নিলাম হলো কেন, জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে মোবাইলের সংযোগ লাইন কেটে দেন।

অন্যদিকে বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুস শুক্কুর বলেন, এবছর বানিয়ারছড়া গোদীটি নিলাম দেয়া হয়েছে কী তা আমার জানা নেই। এব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদে কোন ধরণের আলোচনাও হয়নি। লেজুলেশনে আমরা (পরিষদের সদস্যরা) স্বাক্ষরও দিইনি। একইধরণের কথা বলেছেন পরিষদের আরো দুইজন সদস্য। তাঁদের দাবি, গোপনে গোদী নিলাম দেয়া হলে এটি অবশ্যই বাতিল করতে হবে।

উল্লেখ্য, চকরিয়ার বানিয়ার ছড়া-ফাইতং সড়কের এই গোদীটি নিয়ে বহু বির্তক আছে। এ সড়কের মালামাল আসে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের উৎপাদিত ইট ও কৃষিজ পন্য। বানিয়ারছড়ার আগে এক কিলোমিটারের ভিতরে লামা উপজেলা পরিষদ, ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ সহ বৈধ-অবৈধ চারটি টেক্স-টোল দিয়ে বানিয়ারছড়া গাড়ী ঢুকে। বানিয়ার ছড়ায় উঠা-নামা বা হাত বদলের কোন গোদী না থাকলেও এখানে গোদীর দাবী অন্যায় আবদার এবং সড়কে চাঁদাবাজীর সামিল।

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, ফাইতং সড়কে চকরিয়া বা বরইতলী কর্তৃক গোদী নিলাম দেয়ার কোন বৈধতা নাই। কেননা, এ সড়ক দিয়ে পরিবহন করা সকল মালামাল লামার উৎপাদিত পন্য। যার টেক্স লামা ও ফাইতং য়ে নেয়া হয়। তিনি বলেন, একই সড়কে একই পন্যের উপর চকরিয়ায় সড়কের মুখে গোদীর ডাক মানে সড়কে চাঁদাবাজির সামিল যা অন্যায় আবদার। তিনি এ গোদিটি বন্ধ করে দেয়ার জন্য চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এবছর দেড়লাখ টাকা মুল্যে গোদীটি ইজারা নিয়েছেন ইটভাটা মালিকপক্ষে জামাল উদ্দিন নামের একব্যক্তি। তাঁর বাড়ি ফাইতং ইউনিয়নে। তিনি আবার মোশারফ নামের অপর একজনকে একলাখ টাকার বিনিময়ে গোদীটি উপ ইজারা দিয়েছেন। মোশারফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি এক লাখ টাকায় উপ ইজারা নিয়েছি শুধুমাত্র কৃষি পন্য এবং বনজসম্পদ পরিবহন থেকে টোল আদায়ের জন্য।

বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ বলেন, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের গোদী নিলামে অনিয়ম সংক্রান্ত লিখিত কোন অভিযোগ সর্ম্পকে আমি ওয়াকিবহাল নই। যদিও অভিযোগ দিয়ে থাকলে সেটি অফিসের ডাক ফাইলে থাকবে। তিনি বলেন, লকডাউন সময়ে অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় হয়তো সেটি দেখা হয়নি। তবু অফিস খোলামাত্র অভিযোগটি দেখবো, অনিয়ম হয়ে থাকলে এব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পাঠকের মতামত: