ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ১৫ হাজার জনগণ

চকরিয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে লুকোচুরি চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ১৫ হাজার মানুষ

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মাঝেরপাড়া এলাকায় ২৪বছর আগে দানকরা সরকারি জমিতে নির্মিতব্য কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ কাজে লুকোচুরির অভিযোগ উঠেছে। চলতিবছরের জানুয়ারী মাসে বিদেশী এনজিও সংস্থা আইওএম এর অর্থায়নে ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দে নতুন ভবন নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম।
অভিযোগ উঠেছে, উদ্বোধনের পর প্রায় একমাস নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকলেও রহস্যজনক কারণে কাজ ফেলে উধাও হয়ে যান অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান এনজিও সংস্থা আইওএম’র কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থার কারণে গেল পাঁচমাস ধরে বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ।
এলাকাবাসি অভিযোগ তুলেছেন, নির্মাণকাজে কোন ধরণের জটিলতা থাকলে তা নিয়ে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছে কোন ধরণের যোগাযোগ করেনি। উল্টো গোপনে তাঁরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে লাপাত্তা হওয়ার কারণে যথাসময়ে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত না হওয়ায় লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন ও পাশের কাকারা ইউনিয়নের মোট ১৫ হাজার মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
এলাকাবাসি জানান, ১৯৯৭-৯৮ সালে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মাঝেরপাড়া এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকটি নির্মাণে ব্যক্তিগতভাবে জমিদান করেন লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মোক্তার আহমদ গং। পরবর্তীতে সেই জমিতে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়।
কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও লক্ষ্যারচর ইউপির ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রশিদ আহমদ বলেন, মাঝেরপাড়া এলাকায় এই ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পর থেকে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের প্রায় ৭ হাজার জনগন এবং পাশের কাকারা ইউনিয়নের বারআউলিয়া নগর এলাকার অন্তত ৬ হাজার মিলিয়ে মোট ১৩ থেকে ১৫ হাজার জনগন চিকিৎসাসেবা নিত। আমি আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ক্লিনিকটির বাউন্ডারীও দিয়েছি।
তিনি বলেন, ২৪ বছর আগে দানকরা জমিতে পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে চলতিবছর ২০২২ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয় নতুন করে দুইতলা ফাউন্ডেশনের একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এরই অংশহিসেবে অর্থায়নকারী এনজিও সংস্থা আইওএম ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দে নতুন ভবনটির নির্মাণ কাজও যথারীতি শুরু করছিলেন। চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ আলহাজ জাফর আলম নির্মাণকাজ উদ্বোধনও করেছেন।
ইউপি মেম্বার রশিদ আহমদ দাবি করেন, পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর প্রথমদিকে একটি পরিবার জমির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে মামলা করেন। আমরা সেই মামলা আইনীভাবে মোকাবেলা করেছি। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ভবন নির্মাণের জায়গাটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সম্পত্তি বলে প্রমাণিত হয়। আইনী কোন বাধা না থাকায় এরপর থেকে ভবন নির্মাণকাজ শুরু করার কথা থাকলেও নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও অর্থায়নকারী এনজিও আইওএম এর কর্মকর্তারা রহস্যজনক ভুমিকা পালন করে। এভাবে তাঁরা গেল পাঁচমাস ধরে ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসির অভিযোগ, লক্ষ্যারচর ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের পুরাতন ভবন এরিয়ায় নতুন ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ রেখে এখন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অন্য এলাকায় ভবনটির নির্মাণ কাজ করার পাঁয়তারা করছেন। অথচ নতুন স্পটের একবারে সন্নিকটে আরও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক আগে থেকে রয়েছে। আবার নতুন স্পটে কমিউনিটি ক্লিনিকটি নির্মাণ করা হলে সেখানে যাওয়ার মতো সরকারি কোন ধরণের চলাচল রাস্তা নেই। যেতে হলে অন্যের বাড়ির উঠান দিয়ে যেতে হবে। অদুর ভবিষ্যতে চলাচল রাস্তা নিয়েও সংকট তৈরী হবে। সংর্ঘষও হতে পারে। তাই এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগের নিজস্ব জমিতে কমিউনিটি ক্লিনিকটির ভবন নির্মাণকাজ করার জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি ও জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজ।
বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা.শোভন দত্ত বলেন, লক্ষ্যারচর মাঝেরপাড়া এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকটি ২৪ বছর আগের দানকরা জমিতে প্রতিষ্ঠিত। পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে এবছর ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দে সেখানে একটি দুতলা ফাউন্ডেশনের নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, সাংসদ আলহাজ জাফর আলম উদ্বোধন করার পর কিছুদিন নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকে। পরে দেখা গেছে একটি পরিবার মালিকানা নিয়ে মামলা করেন। আইনী মোকাবেলায় জায়গাটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সম্পত্তি বলে প্রমাণিত হয়।
ডা.শোভন দত্ত আরও বলেন, পুরাতন ভবনের জায়গা নিয়ে এতসব ঝামেলা তৈরী হলে অর্থায়নকারী এনজিও সেখানে ভবন নির্মাণ না করতে অনীহা দেখান। পরে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের অপর একটি পরিবার জমিদান করলে আমরা সেই জমিতে ভবনটি নির্মাণে প্রস্তাব পাঠাই। এখন সেখানেই ভবনটি নির্মাণ রাজি হয়েছেন অর্থায়নকারী এনজিও আইওএম।

পাঠকের মতামত: