ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় ‘ওয়াইল্ডবিস্টের’ ঘরে আবার নতুন অতিথি

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২০০৬ সালে আনা কালো প্রজাতির ওয়াইল্ডবিস্ট দম্পতি বাচ্চা প্রসব করেছে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পার্কের নির্দিষ্ট বেষ্টনিতে এই বাচ্চা প্রসব করে স্ত্রী লিঙ্গের ওয়াইল্ডবিস্ট। প্রসবের পর থেকে ওয়াইল্ডবিস্টের বাচ্চাটি মায়ের কাছ থেকে দুধ খাচ্ছে, লাফালাফিও করছে। তবে বেষ্টনীর কাছে লোকজনের আনাগোনা আঁচ করতে পারলেই বাচ্চাকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতর ঢুকে পড়ছে মা।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ নিয়ে দু’টি বাচ্চা দিল দক্ষিণ আফ্রিকার কালো প্রজাতির এই ওয়াইল্ডবিস্ট দম্পতি। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ঢাকার কাছেই গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে একই প্রজাতির ওয়াইল্ডবিস্ট থাকলেও প্রজননের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত কোন সফলতা আসেনি। সেক্ষেত্রে দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পর পর ওয়াইল্ডবিস্টের ঘরে দু’টি বাচ্চা প্রসবের ঘটনা রীতিমতো অবাক করার মতোই।

সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, নতুন করে জন্ম নেওয়া ওয়াইল্ডবিস্টের বাচ্চাটি তিড়িং–বিড়িং করে মায়ের সামনে খেলছে এবং মায়ের কাছ থেকে দুধ খাচ্ছে। বর্তমানে বাচ্চাটি বেশ সুস্থই আছে। এই প্রজাতির ওয়াইল্ডবিস্টের বিজ্ঞানসম্মত নাম কননোচেটেস গনোও। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একমাত্র কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেই প্রজনন হলো দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর–পূর্ব প্রদেশের একমাত্র কালো প্রজাতির ওয়াইল্ডবিস্টের।

ইতোপূর্বেও একটি বাচ্চা প্রসব করেছিল এই ওয়াইল্ডবিস্ট দম্পতি। ২০০৬ সালে পার্কে প্রথমবারের মতো দু’টি ওয়াইল্ডবিস্টের বাচ্চা আনা হয়। বর্তমানে তাদের সংসারে সদস্য সংখ্যা চারজনে দাঁড়ালো। তন্মধ্যে একটি পুরুষ এবং বাকি তিনটিই স্ত্রী লিঙ্গের।’

সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক কে এম মোর্শেদুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের মাত্র দু’টি জায়গায় দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর–পূর্ব প্রদেশের কালো প্রজাতির ওয়াইল্ডবিস্ট রয়েছে। তন্মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এবং গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। গাজীপুর সাফারি পার্কে এখনো পর্যন্ত ওয়াইল্ডবিস্ট বাচ্চা না দিলেও পর পর দুইবার বাচ্চা দিয়েছে আমাদের পার্কের ওয়াইল্ডবিস্ট। যা সাফারি পার্ক তথা দেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা এবং চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এস এম গোলাম মওলা বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়াইল্ডবিস্ট দম্পতিকে বাংলাদেশে আনার পর সরাসরি নিয়ে আসা হয় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা চকরিয়ার ডুলাহাজারার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। এখানে এসে তৃণভোজী এই প্রাণী খুঁজে পায় পূর্বের সেই আবাসস্থল। এজন্য এখানকার পরিবেশের সঙ্গে সহজে খাপ খেয়ে যায় তারা। আর এতেই প্রজননের ক্ষেত্রে বিরাট সফলতাও এসেছে। এনিয়ে পর পর দুটি বাচ্চা দিয়েছে ওয়াইল্ডবিস্ট দম্পতি।’

পার্কের এই প্রধান কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রতিটি কর্মকর্তা–কর্মচারী তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন বলেই একের পর এক বিরল এবং বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা বন্যপ্রাণীর প্রজনন ঘটছে। ইতোপূর্বেও এই পার্ক বাঘ, সিংহ, কালো ভল্লুক, জলহস্তির মতো বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রজননের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে।’

পার্ক কর্মকর্তারা জানান, ওয়াইল্ডবিস্ট দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে। এরা তৃণভোজী এবং ঘাস, সবজি ও লতাপাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। প্রতিবছর মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যেই এই প্রাণীর প্রজনন হয়। সর্বোচ্চ ২৮ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে ওয়াইল্ডবিস্ট। এই বন্যপ্রাণির গড় উচ্চতা হয় ১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার থেকে ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। জন্ম নেওয়া বাচ্চা ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খেয়েই বড় হয়। তবে বয়স তিনমাস হলেই একটু একটু করে কচি ঘাস খাওয়ার অভ্যাস শুরু করে। প্রাপ্তবয়স্ক ওয়াইল্ডবিস্ট ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে। বয়স ৭ থেকে ৮ মাস হলেই প্রজনন ক্ষমতা আসে ওয়াইল্ডবিস্টের।

পাঠকের মতামত: