ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় উন্নয়ন মেলার স্টলে নারী-পুরুষের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে দর্শক মাতালেন ক্লোজআপ ওয়ানে আরমান ও চ্যানেল আই সেরা কন্ঠের তৃশা

চকরিয়া উন্নয়ন মেলার দ্বিতীয় দিনে প্রেসক্লাবের স্টল পরিদর্শন করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উন্নয়ন মেলার দ্বিতীয় দিনে গতকাল সন্ধ্যার পর চকরিয়া উপজেলা পরিষদস্থ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে সংগীত পরিবেশন করেছেন চকরিয়া উপজেলার দুই কৃতিসন্তান ক্লোজআপ ওয়ান তারকা কমরউদ্দিন আরমান ও চ্যানেল আই সেরা কন্ঠের মারুফা জন্নাত তৃশা। ওইসময় স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো দর্শক গানে গানে নাচতে শুরু করেন।

চকরিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এবারের উন্নয়ন মেলায় স্টল দিয়েছে চকরিয়া প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের স্টলে শোভা পাচ্ছে জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত চকরিয়া উপজেলার উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের সচিত্র প্রতিবেদন। এই স্টলটি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে মেলায় উপস্থিত সবার নজড় কাড়ছে। তারা এই স্টলে শোভা পাওয়া উন্নয়নের সচিত্র সংবাদগুলো আগ্রহভরে দেখছেন।

অপরদিকে চকরিয়ায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলার ৭০টি স্টলকে ঘিরে চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপচে পড়ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব বয়সি নানা শ্রেণী পেশার নারী-পুরুষেরা। মেলায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, এনজিও থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও স্টল দিয়েছে।

জানা গেছে, একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চকরিয়া উপজেলা। জনসংখ্যা সর্বমোট সাড়ে ৬লাখ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৩ কোটি টাকা অর্থায়নে ২০১০ সালে সাড়ে ছয়লাখ মানুষের প্রাণের দাবি মাতামুহুরী নদীতে স্থায়ীভাবে দুইটি রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে সেই থেকে পান্তিক কৃষকরা বিনা খরচে নদীর মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিতে সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি প্রতিবছর উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রতিটি জনপদে বেড়ে চলছে রকমারি সবজির আবাদ। একসময়ের চরম খাদ্য ঘাটতির চকরিয়া আজ নিরাপদ খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। কৃষকরা যেমন আথিকভাবে লাভবান হচ্ছে, তেমনি সরকারও কৃষিখাত থেকে প্রতিবছর বড়অংকের একটি রাজস্ব জাতীয় অর্থনীতিতে যোগান দিতে সক্ষম হচ্ছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনের সুযোগে চকরিয়া উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা তৈরী হয়েছে জনগনের মাঝে। নতুন করে অর্থনৈতিক জোন তৈরীর সমুহ সম্ভাবনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে এখানে। সেই আলোকে ইতোমধ্যে সরকার প্রধানের নির্দেশে অর্থনৈতিক জোন তৈরীর অগ্রযাত্রার অংশহিসেবে মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী পর্যন্ত ২৫ কিমি এলাকায় তৈরী হচ্ছে চারলেনের নতুন সড়ক। নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে দোহাজারী থেকে চকরিয়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ।

আলোর মুখ দেখছে মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা পয়েন্টে নতুন সেতু নির্মাণ কাজ। কাজের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে জমি অধিগ্রহনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সেতুর পাশাপাশি চিরিঙ্গা মাতামুহুরী ব্রীজ থেকে ফাসিয়াখালী ভেন্ডিবাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় নির্মাণ করা হবে আধুনিকমানের ফ্লাইওভার। চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম এবং চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীর সার্বিক প্রচেষ্ঠায় ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভায় মাতামুহুরী ব্রীজ থেকে ফাসিয়াখালী ভেন্ডিবাজার পর্যন্ত আধুনিকমানের ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ অনুমোদন পেয়েছে।

সরকার প্রধান শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অংশহিসেবে চকরিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নের উন্নয়ন অগ্রগতির এসব তথ্য তুলেছেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম। শুক্রবার (৫অক্টোবর) রাতে চকরিয়া উপজেলা পরিষদস্থ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য উন্নয়ন মেলার দ্বিতীয় দিনে চকরিয়া প্রেসক্লাবের স্টল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে তিনি চকরিয়া উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত পাঁচবছরে সরকারি অন্তত ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫২০ কোটি টাকা বরাদ্দে প্রায় আড়াই হাজার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখনো উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অন্তত তিন থেকে চারশতাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে।

চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বলেছেন, পাঁচবছরে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন চকরিয়া পৌরসভা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) বিভাগ, কৃষি বিভাগ, প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর (পিআইও), সমাজসেবা বিভাগ, খাদ্য অধিদপ্তর, শিক্ষা বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিভাগ, অন্তত ২৮টি প্রতিষ্ঠান।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চকরিয়া পৌরসভার পক্ষ থেকে এবারের উন্নয়ন মেলায় উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ফিরিস্তি তুলে একটি স্বরণিকাও প্রকাশ করেছেন। পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরীর তত্তাবধানে প্রকাশিত স্বরণিকায় ২০১৬-১৮অর্থবছরে (দুই অর্থবছর) চকরিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে অন্তত ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দে চারশতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন বলে তথ্য তুলেছেন। পাশাপাশি এখনো ৫০-৬০টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান আছে বলে স্বরনিকায় প্রকাশ করেছেন। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধূরী বলেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। এই অগ্রযাত্রায় শামিল হয়েছে চকরিয়া পৌরসভা। ইতোমধ্যে নিজস্ব তহবিল ও সাহায্য সংস্থার অর্থায়নে চকরিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে অন্তত ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দে চারশতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি এখনো অর্ধশতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রয়েছে। মেয়র বলেন, পৌরবাসির জন্য এবারের উন্নয়ন মেলায় আমরা একটি সুখবর দিতে চাই, সেটি হচ্ছে সাহায্য সংস্থার পক্ষ থেকে চলতি অর্থবছর চকরিয়া পৌরসভা আরো ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। টাকা ছাড় পেলেই পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে চকরিয়া পৌরসভাকে স্বপ্নের মেগাসিটি বির্নিমানের কাজ শুরু করবো ইনশাল্লাহ। পৌরসভার স্টলে উন্নয়নের স্বরনিকা জনগনের কাছে বিলি করছেন প্রকৌশল বিভাগের আবদুল হামিদ, মেয়রের সহকারি শেফায়েত ওয়ারেসিসহ পৌরসভার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী।

চকরিয়া প্রেসক্লাবের স্টল পরিদর্শনকালে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়া বেগম শম্পা, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আমিনুর রশীদ দুলাল, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম লিটু, মাতামুহুরী আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাহারবিলের চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বাবু এমআর চৌধুরী, চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন, কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান, চকরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী, কার্যকরী সভাপতি ছোটন কান্তি নাথ, সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম হানিফ, সহ-সভাপতি রফিক আহমদ, চকরিয়া নিউজ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মিজবাউল হক, যুগ্ম সম্পাদক মুকুল কান্তি দাশ ও মনজুর আলম, অর্থ সম্পাদক এম জিয়াবুল হক, দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খোকন, প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক এম মনছুর আলম, তথ্য-প্রযুক্তি সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ, ক্রীড়া সম্পাদক বাপ্পি শাহরিয়ার, নির্বাহী সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক এম আর মাহমুদ, নির্বাহী সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক এ এম ওমর আলী, নির্বাহী সদস্য এ কে এম ইকবাল ফারুক ও জিয়াউদ্দিন ফারুখ ও ডুলাহাজারা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল বারেক টিপু প্রমুখ।

পাঠকের মতামত: