বাঁ থেকে : গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, ফজলুল করিম সাঈদী ও আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিক
ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চকরিয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে একক প্রার্থী হিসেবে দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর নাম ঘোষণার পর ‘বিদ্রোহ’ শুরু হয়েছে। গত রবিবার তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গাসহ উপজেলাজুড়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। মহাসড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ও শ্রমিকনেতা ফজলুল করিম সাঈদীকে প্রার্থী চেয়ে স্থাপন করা হয়েছে কলাগাছ।
দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমিসহ দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। আশা ছিল, বদনাম নেই এমন কাউকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু যাঁকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে দলের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বন উজাড়, সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে ইটভাটা স্থাপনের ঘটনায় বনবিভাগের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নির্যাতন, তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি দখলে রাখা, পাহাড় সাবাড় করা, এলাকায় ভাই ও শ্যালকের রাজত্ব কায়েমসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এজন্য দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে।’
দলের ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দেওয়া ফজলুল করিম সাঈদী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা তো আছেনই, উপজেলার আপামর জনগণের আশা ছিল আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেটি না হওয়ায় তৃণমূলের পাশাপাশি সাধারণ জনতাও আমার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। প্রতিবাদস্বরূপ তাঁরা আমার সমর্থনে কলাগাছ রোপণ করেছেন। কিন্তু আমার সমর্থিত লোকজনের ওপর ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলার খবর পাচ্ছি আমি। এক্ষেত্রে সকলকে ধৈর্যধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি আমি।’
এদিকে এখনো নড়াচড়া নেই বিএনপির। প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে দলটির কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর নামও আলোচনায় নেই সাধারণ জনগণের মাঝে। তবে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে অর্ধ লক্ষাধিক ভোট পেয়ে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে আসা জামায়াত সমর্থিত চকরিয়া উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিকের নামও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকরিয়া উপজেলা বিএনপির এক নেতা চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘দলের ব্যানারে আমাদের কেউ নির্বাচন করবেন না। এজন্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কাছে আমরা অটল রয়েছি। তবে বিএনপি পরিবারের পরিচ্ছন্ন কোনো এক ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। যা সময় হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
জানতে চাইলে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী চকরিয়া উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমার রাজনীতি সবসময় জনগণকে নিয়ে। সামাজিক কর্মকাণ্ড, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবসময় আমি জনগণের পাশে থাকার কারণে তাঁরা আমাকে বেশি ভালোবাসেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রের কারণে পর পর দুবার আমার বিজয় ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব কিনা তা এখনই বলার সময় আসেনি। দিন ঘনিয়ে আসতে আসতে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী চকরিয়া উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিককে আগের মতো আর মাঠে দেখা না গেলেও সময় সুযোগ এলে তিনি জামায়াত থেকে প্রার্থী হবে বলে লোকমুখে শুনা যাচ্ছে।
এদিকে নারী ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে শেষপর্যন্ত দলীয় তথা নৌকার মনোনয়ন না দেওয়ার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হওয়ায় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের অনেক প্রার্থী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। তাঁরাও মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন নিজের পক্ষে।
পাঠকের মতামত: