নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীতে বাস ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও কমবেশি আরো ১৫ জন আহত হয়েছে। তাদেরকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরন করেছে। দুর্ঘটনার কারনে ঘন্টাব্যাপী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আজ ১৯ ফ্রেবুয়ারী বুধবার দুপুর ১২ টার সময় মহাসড়কের খুটাখালী মইক্ক্যাঘোনা এলাকায় ঘটে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা। তাৎক্ষনিক হতাহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনাস্থলে রয়েছে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ। তারা যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার অলি আহমদ।
নিহত দুই চালকের মধ্যে ট্রাকচালকের নাম পাওয়া গেছে। তিনি হলেন ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার মৃত শাহজাহানের পুত্র মোহাম্মদ লিটন (৩৫)। নিহত বাসচালকের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাইওয়ে পুলিশের কতিপয় সদস্যের ধাওয়া খেয়ে পালানো ট্রাকের সাথে বিপরীতমুখী হানিফ পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বাস ও ট্রাকের দুই চালকেই নিহত এবং বাসের অন্তত ১৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ধাওয়া ঘটনাটি গুজব বলে দাবি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে ট্রাক। চেয়ারকোচটি পার্শ্ববর্তী ধানি জমির পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রানে রক্ষা পায় যাত্রীরা।
পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরন করেছে।
মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোরশেদুল আলম চৌধুরী দুর্ঘটনায় দুজন চালক নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কক্সবাজার ছেড়ে আসা কংকরবোঝাই ট্রাকের (নারায়ণগঞ্জ-ট-০২-০৩২৬) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় বিপরীত দিক থেকে আসা হানিফ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-০৭৯১)। এ সময় ট্রাক ও বাস দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে বাসটি সড়ক থেকে খাদে নেমে পড়ে।
আইসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী আরো বলেন, দুর্ঘটনায় বাসের বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে নিয়ে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বারবার দূর্ঘটনার নেপথ্যে ::
বিভিন্ন সুত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও লবণ পরিবহণে ট্রাকে ওয়াটার প্রুপের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়না। ফলে লবণ গাড়ি থেকে সড়কে গলে পড়ে লবণ পানি। ওই পানি প্রথমে সড়কে জমলেও কুয়িাশা পড়ার পর সড়ক হয়ে পড়ে পিচ্ছিল। ওই অবস্থায় যেকোন গাড়ি ব্রেক কষলে বা বাঁকে গাড়ি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছলে যায় অথবা অন্য গাড়ির সাথে সংঘর্ষ হয়।
এছাড়া মহাসড়কের চকরিয়ার ৩৯ কিলোমিটার অংশে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। ওই বাঁকগুলোর প্রতিটি অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ের ভেতর রয়েছে। ফলে, পর্যটন শহর কক্সবাজারমুখী নতুন কোন চালক গাড়ি নিয়ে আসলেই আগাম সতর্কবার্তা না বুঝে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। এছাড়া ফাঁসিয়াখালী থেকে খুটাখালী পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ জনগণের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তিন চাকার গাড়ি মহাসড়কে চলতে বাধ্য হয়। হাইওয়ে পুলিশ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপের অজুহাতে ওই গাড়িগুলোকে জব্দ করতে ধাওয়া দিলে দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কের পাশ ঘেষেই কতিপয় ব্যক্তি ইট-বালি মজুদ করে ব্যবসা করায় ওই অংশে মহাসড়ক সরু হওয়ায় দ্বি-মুখি গাড়ি চলাচল করতে গিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সড়কের বিভিন্ন অংশের যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্টান ও হাটবাজার রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত গতিরোধক না থাকায় অকালে প্রাণ হারাচ্ছে পথচারীরা।
এসব সমস্যা সমাধানের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও এখনো কোন সুরহা হয়নি বলে জানান নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চকরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি সোহেল মাহমুদ।
তিনি বলেন, সড়কে মৃত্যুও মিছিল থামাতে নানা দাবি-ধাওয়া ইতোপূর্বে নিসচা চকরিয়ার পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার স্মরকলিপি দেয়া হয়েছে। করা হয়েছে র্যালী ও মানববন্ধন। আমাদের দাবিগুলোর অর্ধেকটা পূরণ হলেও সড়কে দূর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
পাঠকের মতামত: