এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া ::
বর্ষার শুরুতে টানা বর্ষণে চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে অন্তত ৭ হাজার একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত। মাতামুহুরী নদীসহ সংযুক্ত ছড়াখালগুলোর খনন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। বৃষ্টির পানি নামার ব্যবস্থা না হলে আমন মৌসুমে অধিক খাদ্য উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কাকারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান চকরিয়া নিউজকে জানান, তার ইউনিয়নে চাউম্যা কাটাবিল (পুলেরছড়া) ও নলবিলা বিলে ৮-১০ ফুট উঁচু পানি জমে রয়েছে। নলবিলা কেন্দ্রিক দুটি ছড়া ও বাইশ্যারছড়া অত্যধিক ভরাট হয়েছে। পাশাপাশি ছিকলঘাট অংশে ছড়াখাল ভরাট করে চাষাবাদ ও ঘরনির্মাণ করায় বৃষ্টির পানি মাতামুহুরী নদীতে বের হতে পারে না। ফলে প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। অন্তত ১৫শ একর জমিতে আমন চাষ হয় না। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে অবহিত করলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পেলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার চকরিয়া নিউজকে জানান, এ ইউনিয়নের নলবিলা অংশে ও বাইন্যারকুম এলাকায় অন্তত ৫০০ একর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল জানান, তার ইউনিয়নে ছোট ভেওলা, খিলছাদক, ভরইন্যারচর, খোজাখালী ও মধ্যম কৈয়ারবিলস্থ অন্তত ১৫০ একর জমিতে আমন চাষ করা অসম্ভব। ডুলাহাজারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, এই ইউনিয়নে উলুবনিয়া ও পাগলির বিল এলাকায়ও অন্তত ৫০০ একর জমিতে আমন চাষ করা অনিশ্চিত। ভরাট হয়ে যাওয়া পাগলিরছড়া খনন না হওয়ায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
বরইতলীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া চকরিয়া নিউজকে বলেন, সোনাইছড়িখাল, হারবাং ছড়াখাল, তোতকখালী খাল ও পহরচাঁদা খাল খনন না করায় বিবিরখিল, গোবিন্দপুর, ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদ, দক্ষিণ বরইতলী ও বানিয়ারছড়া এলাকার অন্তত ১৮৫০ একর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত। উপরোক্ত ছড়াখাল খনন করে মাতামুহুরী নদীতে পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে এই ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫ হাজার কৃষক পরিবার খাদ্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করার অজুহাত দেখিয়ে হারবাংছড়া খালের উজানের ৬ কিলোমিটার অংশে খনন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও নিচের অংশ খনন না করায় তা কোন কাজেই আসছে না। ফলে বরইতলীর বিশাল আবাদী জমি প্রতি বর্ষায় পানির নিচে তলিয়ে থাকায় চাষাবাদ হয় না। এতে হতদরিদ্র কৃষকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন জানান, আগে ছোট-বড় খাল ছিল। বৃষ্টি হলেই পানি ভাটির দিকে নেমে যেত। এখন, রেললাইন সহ বাঁধ দেওয়াতে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে পালকাটা, বুড়িপুকুর ও সওদাগর ঘোনাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে অন্তত ১শ একর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া হারবাং, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা ও খুটাখালীতে ২০০০ একর জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে আমন চাষ হয় না বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম নাসিম হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, চকরিয়া খাদ্য উদ্বৃত্ত উপজেলা। জলাবদ্ধতা দূরীকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হলে খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়ানো যেতো। এতে সারাদেশের চাহিদা পূরণে সহায়ক হতো।
খোঁজখবর নিয়ে ও সরেজমিন দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাংসদ সদস্যের সাথে পরামর্শক্রমে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, বর্ষায় আমন চাষাবাদ নিশ্চিত করতে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ইউপি চেয়ারম্যানদের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী চকরিয়া নিউজকে বলেন, কিছু কিছু ভরাট খাল খননের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভরাট হয়ে যাওয়া সবক’টি ছড়াখাল খনন করে বর্ষা মৌসুমে আমন চাষ নিশ্চিতপূর্বক খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষক পরিবারে হাসি ফোটাতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অচিরেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বরাদ্দ পেতে।
পাঠকের মতামত: