ঢাকা,বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় “নাডা’র আঘাত মোকাবেলায় চট্টগ্রামে সর্বাত্মক প্রস্তুতি, বন্দরে এলার্ট-২ জারী

wবশির আলমামুন, চট্রগ্রাম :

ঘূর্ণিঝড় “নাডা’র আঘাত মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গত রাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক জরুরী সভায় এ কথা জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন।

ঘূণিঝড় “নাডা’র ক্ষতি মোকাবেলা এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে জরুরী সভা আহবান করেন চট্টগ্রাম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগকালীন সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলে জানান ডিসি সামসুল আরেফিন।

জেলা প্রশাসক বলেন, দুর্যোগপ্রবণ উপজেলাগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের সাইক্লোন সেন্টারগুলো প্রস্তুুত রাখতে বলা হয়েছে। এলাকাগুলোতে এখনও সাইরেন ব্যবহার করা না হলেও মেগাফোনের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক সভায় বিভিন্ন সংস্থ্যার কাছে ঝড়ের কারণে পাহাড় ধস হলে মোকাবেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে ফায়ার ‍সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান। এসময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তাদের যথেস্ট প্রস্তুুতি রয়েছে বলে জেলা প্রশাসককে নিশ্চিত করেন। সভায় উপস্থিত রেড ক্রিসেন্ট ও এনজিও’র কর্মকর্তারা তাদের স্বেচ্ছাসেবক দলকে প্রস্Íুুত রাখা হয়েছে বলে জানান।

এদিকে যেকোনা প্রকার যোগাযোগে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে জেলা প্রশাসক। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ৬১১৫৪৫ ও ০১৮২৭৮৯৯৯১৪ নাম্বারে ফোন করে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে যেকোন তথ্য জানা যাবে।

এদিকে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল, জেটি, হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট ইত্যাদি নিরাপদ রাখার স্বার্থে রাতে জরুরি সভা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বন্দর ভবনে রাতে অনুষ্ঠিত সভায় সভায় দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। এর ফলে আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করার পর আজ শনিবার দুপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা ‘অ্যালার্ট-২’ জারি করা হয়েছে।

বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলম রাতে জানান, ‘অ্যালার্ট-২’ অনুযায়ী বন্দর জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে শক্তভাবে বেঁধে রাখা, ক্রেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ইত্যাদি কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। তবে বন্দরের অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আজ সকাল থেকে বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য স্থানান্তর কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসকাজ চলছে।

মূলত দুর্যোগ মোকাবিলায় কখন কী করতে হবে, তা ঠিক করতে বন্দরের নিজস্ব প্রস্তুতির জন্য এই সতর্কতা জারি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করে। বিপৎসংকেত ৫,৬ ও ৭ নম্বরের জন্য বন্দরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়। মহাবিপদ সংকেত ৮,৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়। সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি হলে বন্দর জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (১০) বলা হয়েছে, মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

নিম্নচাপটি দুপুর ১২টায় (০৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কি.মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৯৫ কি. মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫০০ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯৫ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিলো।

‘এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ৬ নভেম্বর সকাল নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে’।

আবহাওয়া অফিস জানায়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কি. মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর সংকেত নামিয়ে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় “নাডা’র প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির কারণে নগরীর সড়কগুলোতে গাড়ির সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে বেশিরভাগ গাড়ি।

মাছ ধরার নৌযানগুলো ফিরে আসছে উপকূলের বিভিন্ন ঘাটে। ফিরিঙ্গিবাজার, ফিশারিঘাট, কাট্টলীসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে সারি সারি মাছধরার নৌযান। তবে বৈরী আবহাওয়ায় সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।##

পাঠকের মতামত: