নিজস্ব প্রতিবেদক ::
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বিপর্যস্ত কক্সবাজারের চিংড়ি চাষ। একদিকে চিংড়ি পোনার সংকট আসন্ন, অপরিদিকে মওজুত করা পোনা জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষীরা। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতির পরিমান ৪৭ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস। এছাড়া গত ২০ মে তেকে মাদার চিংড়ি আহরণ বন্ধ থাকায় ২০ জুনের পরে হ্যাচারীতে পোনা পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইয়াস-এ বিপর্যস্ত কক্সবাজারের চিংড়ি চাষ। জলোচ্ছাসে ভেসে গেছে মওজুত করা পোনা। চাষীরা সম্প্রতি পোনা নার্সারী করার মধ্যে শুরু করেছিলেন চাষ। তবে শুরুতেই জোয়ারের পানিতে ঘের তলিয়ে যাওয়ায় এখন মাথায় হাত পড়েছে চাষীদের। প্রাপ্ত তথ্যমতে গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সমুদ্রে মাদার চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। হ্যাচারী মালিকরা জানিয়েছেন আগামী ২০ জুন থেকে পোনার সংকট দেখা দিতে পারে। এরপর পোনা পেতে আরো সময়ের প্রয়োজন হবে। মাদার না থাকলে পোনা উৎপাদনের কোন সুযোগ নেই। চাষীরা চাইলেও হ্যাচরী তেকে পোনার সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বিপ্লব চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন,‘ইয়াস’ এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি ঘেরের চুড়ান্ত তালিকা করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৪৭ কোটি ৯৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি ঘেরে। এই বিষয়টি মৎস্য অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরের মালিকদের সহযোগীতা করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সরকার যা সিদ্ধান্ত দেবে তাই হবে। তিনি আরো বলেন, হ্যাচারী মালিকদের পোনার সংকট হবে এমন দাবীটি সত্য নয়। আমরা নিশ্বয়তা দিচ্ছি কোন পোনার সংকট হবে। যে পরিমান পোনা উৎপাদন হয়েছে তা নির্বিঘ্নে জুলাই মাস পর্যন্ত চলবে। এছাড়া কিছু হ্যাচারী দেশের বাইরের তেকে মাদার সংগ্রহ করেছে। তাই পোনার সংকট হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
এদিকে চিংড়ি চাষী মহেশখালীর কালারমারছড়ার আনচারুল করিম রুমি জানিয়েছেন, দুইটি ঘেরের প্রায় ২০ লাখ টাকার পোনা পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। গত মার্চ থেকে ঘেরে নার্সারী করে পোনা মওজুত করে আসছি।
সম্প্রতি ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সব নার্সারী ভেসে গেছে। এছাড়া হ্যাচারীতে পোনার সংকট হলে আমরা বিপুল লোকসানের সম্মুখিন হব। মৎস্য অফিস তেকে চাষীদের সহযোগীতা না করলে চাহিদামত চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব নয়। প্রায় সব চাষীই দাদন গ্রহন করে চাষ শুরু করেছে। তাই পুনরায় পুঁজি দেওয়ার সম্বল কারো নেই।
ধলঘাটার চিংড়ি চাষী আকতারুজ্জামান মেম্বার জানিয়েছেন, প্রায় কোটি টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে চাষ শুরু করেছিলাম। এখন তা সমুদ্রের পানির নীচে। আমরা কি করব ভেবে পাচ্ছি না। এখন পুঁজির অভাবে পোনা সংগ্রহ করতে পারব কিনা আমাদের জানা নেই। সরকারের উচিত চিংড়ি চাষীদের আর্থিকভাবে সহযোগীতা করা। না হয় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে কক্সবাজারের চিংড়ি চাষ। দেশ বঞ্চিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় চলতি মৌসুমে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। গত মার্চ তেকেই ঘেরে পোনা মওজুতের কাজে নেমে পড়েন চাষীরা। হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ সবকিছু ধুলিস্যাৎ করে দেয়। স্থানীয়দের দাবী অনুযায়ী প্রায় ১৫০ টি চিংড়ি ঘের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাঠকের মতামত: