ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

খুটাখালীর হোমিও চিকিৎসক শওকত ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি, খোঁজ নিলেন সচিব হেলাল

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁহ ::
কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁহ থানাস্থ এম ইসলাম জসিম উদ্দীন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ অসুস্থ শওকতুর রহমানকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে দেখতে গেলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
তিনি গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে গিয়ে তার খেঁজখবর নেন। এসময় তিনি দীর্ঘক্ষন অবস্থান করে তার চিকিৎসার অগ্রগতি ও চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় ভার প্রদান করেছেন।
হেলালুদ্দীন আহমদ সম্পর্কে ডাঃ শওকতুর রহমান মামাত ফুফাতো ভাই।
ডাঃ শওকত চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়ার মরহুম মৌলানা আফজল আহমদ বিএ’র দ্বিতীয় পুত্র। তিনি পেশায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক।
উলেখ্য, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারী ডাঃ শওকত কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের মালুমঘাট ষ্টেশনের দক্ষিনে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত হন। এসময় তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি গত ১৩ আগষ্ট ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধিন অবস্থায় তিনি হাসপাতালের বেডে শুয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না” শিরোনামে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। তিনি যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হল।
“একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না” বিগত ২৯/০১/২০১৫ ইং মালুমঘাট ষ্টেশনের একটু দক্ষিণে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত হয়।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় মালুমঘাট মেমোরিয়াল খৃষ্টান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এসময় আমি প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। ঘটনাটি তাৎক্ষনিক খুটাখালীতে ছড়িয়ে পড়িলে শত শত আত্মীয়স্বজন বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী হাসপাতালে ভীড় করেন।
আমার যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন দেখি এম্বুলেন্সেরর মধ্যে।
ঐসময় কানে আওয়াজ আসছে প্রাণে বাঁচাতেই চট্টগ্রাম রেফার করা হয়েছে।
মনের অজান্তেই চোখের পানি চলে যাচ্ছে। এ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।
আমার অবুঝ শিশু ফাহাদ এবং নাজাহকে আল্লাহর কাছে বুঝিয়ে দিয়ে কলেমা পড়তে পড়তেই চট্টগ্রাম পৌছলাম।
প্রথমে সার্জিসকোপ হসপিটালে অপারেশন হয়। পরে পলি ক্লিনিকের কেবিনে দশ দিন চিকিৎসা দেয়া হয়।
এসময় অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হসপিটালে রেফার করা হয়। সেখানে আরো এক মাস চিকিৎসা বোর্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাসপাতালে আমার প্রধান চিকিৎসক ছিল ককসবাজার সদর উপজেলার পোকখালী- ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিলদার আক্তারের ছেলে ডাঃ আ ন ম হারুনর রশিদ।
তার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠি।
আমাকে পাঁচটি বছর বিনা পয়সায় তিনি চিকিৎসা সেবা ও চেকআপ প্রদান করেছেন। আমি ও আমার পরিবার তার প্রতি চির কৃতজ্ঞ।
বিগত ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বারের মত হাঁটু অপারেশন করে ভিতরে স্টিলের কাকড়া বাহির করা হয়।
পরবর্তীতে ডাঃ হারুন ভাইয়ের ওখানে চেকআপে গেলে ওনি আমাকে পরামর্শ দিলেন শরীরের ওজন কমাতে। না হয় হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত দীর্ঘ ষ্টিলটি খোলে ফেললে ঝুঁকিতে থাকতে হবে।
যেহেতু ভাংগা অংশটা অনেক বড়। একদিকে পায়ের ব্যাথা অন্যদিকে পাত বাহির করাই ছিল ঝুঁকি।
কটি বছর খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
এরই মধ্যে আমার ফুফাতো ভাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আমার গ্রামের বাড়ী খুটাখালীর দক্ষিণ পাড়ার রাস্তার ব্যাপারে দেখতে আসলে তার সাথে এবিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করা হয়। এসময় হেলাল বদ্দা আমাকে ঢাকা পঙ্গু হসপিটালে আসার পরামর্শ দেয়।
তাৎক্ষনিক ডাঃ হারুন ভাইয়ের সাথে এ বিষয়ে পরামর্শ চাইলে তিনিও পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
উভয়ের কথা মতো গত ১১ আগষ্ট ঢাকায় আসি এবং ১৩ আগষ্ট হেলাল বদ্দা ফোন করে বলেন হাসপাতালে যাও আমি সব ঠিক করে দিয়েছি। হাসপাতালের আউটডোরে আসতেই অচেনা এক নাম্বার থেকে কল আসে আপনি কি শওকত সাহেব?
আমি বললাম, হ্যাঁ সে বলল হেলাল সাহেব মেসেজ দিছে আপনি ২২০ নং এ আসেন আমি ডাঃ জাহাঙ্গীর।
ডাক্তারের কক্ষে গিয়ে কুশল বিনিময়ের পরে এক্সরেটি দেখার পর সেও ডাঃ হারুনের একই সুরে সুর মিলাচ্ছেন।
সাথে সাথে আমার শরীর থেকে ঘাম বের হল।
পরে বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত দিল পা টা ভাল করতে হলে আরো তিনবার অপারেশন করতে হবে প্রথমে এটা খুলতে হবে।
দ্বিতীয়ত ভিতরের ইনফেকশন কাটিয়ে উঠলে ভিতরের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ছোট একটা রড দিতে হবে।
তাও তিন চার মাসের ভিতর। পরে আরো কয়েক বছর পর হাড় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলে ৫ম বারের মত অপারেশন করতে হবে।
আমি রাজি হয়ে গেলাম। ডাঃ জাহাঙ্গীর সাহেব একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন ভর্তির জন্য । ভর্তির টাকাও হেলাল বদ্দা দিয়ে দিছে।
এসিসহ ভি আইপি কেবিনে উঠলাম। ক দিন অপেক্ষার পর গত ২৩ আগষ্ট সকাল নয়টায় তৃতীয় বারের মত অপারেশন সাকসেস হয়।
চতুর্থ এবং ৫ম বারের অপারেশনর প্রতিক্ষার দিন গুনতে হবে ইনশাআল্লাহ।
হাসপাতালের কেবিনে অবসর সময়ে একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্নার ছোট্ট বাস্তব গল্পটি লিখলাম।
চট্রগ্রাম এবং ঢাকার হসপিটালে থাকা অবস্থায় যারা আমাকে সময়, অর্থ, খাওয়া দাওয়া ,রক্ত, শারিরিক পরিশ্রম এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিশেষ করে আমার সহধর্মিণী ফিরোজা ফারজানা কলি যিনি অবিরত আজও পরিশ্রম করে যাচ্ছে তিনিসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। যাতে আল্লাহ আপনাদের মাঝে আবার আমাকে ফিরিয়ে আনেন। আমিন। চুম্মা আমিন।

পাঠকের মতামত: