আইন অনুযায়ী কাবিন রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করে ঘোষণার জন্য অ্যাফিডেভিট করা যাবে। আবেগঘন সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক তরুণ-তরুণীর ভুল ধারণা হয় যে, কেবল অ্যাফিডেভিট করে বিয়ে করলে বন্ধন শক্ত হয়। ধারণাটি সম্পূর্ণ রুপে ভুল।
আমাদের সমাজে অনেক উঠতি বয়সি ছেলেমেয়ে, প্রেমিক-প্রেমিকারা কোর্ট ম্যারেজ বা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করে। আইনের দিক থেকে এই কোর্ট ম্যারেজ অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে কতটা নির্ভরশীল সে সম্পর্কে কোনো সঠিক ধারণা না রেখেই অনেকেই আবেগকে প্রশ্রয় দিয়ে এই কোর্ট ম্যারেজ করে।
কোর্ট ম্যারেজ কি: কোর্ট ম্যারেজ বলে আইনে নির্দিষ্ট করে সঠিক কিছু উল্লেখ নেই। যুবক-যুবতী বা নারী-পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করে তা-ই ‘কোর্ট ম্যারেজ’ নামে পরিচিত। বিয়ে বা বন্ধন হিসেবে আলাদাভাবে এর কোনো (কোর্ট ম্যারেজ) আইনগত ভিত্তি নেই।
এ রকম কোনো বিয়ে (কোর্ট ম্যারেজ) যদি কাজী অফিসে নিবন্ধন না করা হয় তাহলে আইনগত কোনো ভিত্তি থাকে না। কোর্ট ম্যারেজ বিয়ের একটি ঘোষণা মাত্র। বৈধ উপায়ে বিয়ে করে কাজীর কাছ থেকে নিবন্ধন করিয়ে নিয়ে তবেই কেউ ‘কোর্ট ম্যারেজ’ বা অ্যাফিডেভিট করতে পারেন। নিবন্ধন বা কাবিননামা যদি না থাকে তবে অ্যাফিডেভিটে আইনগত অধিকার আদায় করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
যদি কোনো এক সময় (স্বামী-স্ত্রী) বা যে কোন পক্ষ থেকেই বিবাহ বন্ধন ত্যাগ করেন তাহলে আইনগত কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না, যদি কিনা কাজীর কাছ থেকে নিবন্ধন করিয়ে না নেয়া হয়।
দুইশত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে কোর্ট ম্যারেজ বলে অভিহিত করা হয়। এফিডেভিট বা হলফনামা (কোর্ট ম্যারেজ) একটি ঘোষণা মাত্র।
সঠিক পুদ্ধতিতে কাবিননামা রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন সম্পূর্ণ করতে হলে কাজীর নিকট যেতেই হবে। যদি কাবিন নিবন্ধন করা না হয় তাহলে স্ত্রী মোহরানা আদায় করতে ব্যর্থ হবে। আইন অনুযায়ী তার বিয়ে প্রমাণ করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ এর ধারা ৫(২) অনুযায়ী, যে ক্ষেত্রে একজন নিকাহ-রেজিস্ট্রার ছাড়া অন্য ব্যক্তি দ্বারা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় সে ক্ষেত্রে বর বিবাহ অনুষ্ঠানের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ-রেজিস্ট্রারের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
ধারা ৫(৪) অনুযায়ী এ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে দুই বছর পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।
সুতরাং, কোর্ট ম্যারেজ আসলে কোনো বিয়েই নয়। বিয়ের ঘোষণা মাত্র কেবল। বৈধ উপায়ে বিয়ে করে ও নিবন্ধকের (কাজীর) কাছে সেটির নিবন্ধন করিয়ে নিয়ে তবেই কেউ ‘কোর্ট ম্যারেজ’ বা অ্যাফিডেভিট করে নিতে পারে। নিবন্ধন বা কাবিননামা না থাকলে কেবল অ্যাফিডেভিটে আইনগত কোন প্রকার অধিকার আদায় করা সম্ভব নয়।
পাঠকের মতামত: